
অনলাইন ডেস্কঃ
আঁধার কাটছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের। পদে পদে বাধার কারণে কয়েক বছরের প্রচেষ্টাও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরাতে পারেনি মিয়ানমারে। উল্টো রাখাইন আরাকান আর্মির দখলে চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ অভিমুখে নতুন করে নেমেছে রোহিঙ্গা ঢল। এতে করে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বোঝা বাংলাদেশকে ফেলেছে গভীর সংকটে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে নানা গ্রুপের লড়াই-সংঘাত প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে সেখানকার বেশ কিছু অঞ্চল বিদ্রোহী আরাকান আর্মি দখল করেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। তবে প্রত্যাবাসনে আমাদের তৎপরতা থেমে নেই।
সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট- রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, সেখানেই ফিরে যাওয়াই তাদের ভবিষ্যৎ। ’
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও চারবারের এমপি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকার বড় ধরনের ভুল করেছে। রোহিঙ্গা আসার দুই মাসের মধ্যে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি চুক্তি করে। এ চুক্তি ছিল আমাদের জন্য আত্মঘাতীমূলক।
ওই চুক্তি না হলে এ বিষয়ে আমরা অনেক কাজ করতে পারতাম।
জানা যায়, গত রমজানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পে অনুষ্ঠানে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার ঘোষণা দেন। পরে তা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ ঘোষণার পর উল্টো মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে।
জানা যায়, গত রমজানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পে অনুষ্ঠানে দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার ঘোষণা দেন। পরে তা ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ ঘোষণার পর উল্টো মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে।
কিন্তু মিয়ানমার সরকারের অনীহার কারণে এ পর্যন্ত একজনকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। প্রতিদিনই আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরে নতুনভাবে প্রায় ১ লাখের মতো রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। মিয়ানমারের পাশাপাশি ভারত থেকেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তারাও কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এতে চাপ বাড়ছে বাংলাদেশের ওপর। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। অনিবন্ধিত মিলিয়ে এ সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চারটি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম। তার মতে- চারটি প্রতিবন্ধকতার কারণে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরানো যাচ্ছে না। এ প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের না ফেরাতে মিয়ানমার সরকারের অনড় অবস্থান, রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি সরে যাওয়া, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কূটনৈতিক তৎপরতার অভাব। ’
সম্প্রতি ভারতের কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে টেকনাফের ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা। তাদের একজন টেকনাফ লেদা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া আবুল আলী বলেন, ‘৯ জুন আমরা ৫০ জন ভারতের কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে টেকনাফের ক্যাম্পে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছি। আমি এক বছর জেল খেটেছি। ভারতে ইউএনএইচসিআর কার্ড ছিল আমাদের। আমার মতো অনেক রোহিঙ্গা নাগরিককে বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে ভারত। ’
রোহিঙ্গা নেতা কুতুপালং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মাজেদ আবদুল্লাহ বলেন, আরাকান আর্মির দখলে রাখাইন। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। আরাকান আর্মি সেখানকার সরকারি বাহিনীকে উৎখাত করে বেশির ভাগ এলাকা দখলে নিয়েছে। রাচিডং-বুচিডং শহরের অন্তত ২ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাস্তুহারা। মংডু টাউনও তাদের দখলে। সব মিলিয়ে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গার দেশে ফেরা অনিশ্চিত।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন