
অনলাইন ডেস্কঃ
যশোর জেলার অভয়নগরে শাহনেওয়াজ কবীর টিপু নামে এক ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুঁতে রেখে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের মামলার অন্যতম আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার রাতে নগরীর হোটেল রোজ গার্ডেন-২ নামের একটি আবাসিক হোটেল থেকে তাকে গ্ৰেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে তাকে অভয়নগর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্ৰেপ্তার আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আসাদুজ্জামান তার সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম জানান, জনিকে আমরা বুঝে পেয়েছি। তাকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এর আগে অভয়নগরে এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বুকসমান গর্তে পুঁতে রেখে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে পদ স্থগিত হওয়া স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ও এক সাংবাদিক নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর ওরফে টিপু (৪৮) নওয়াপাড়া এলাকার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী।
ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৩১ জুলাই অভয়নগরের রাজঘাট সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীরের স্ত্রী আসমা খাতুন। অভিযোগে তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌর কমিশনার আসাদুজ্জামান জনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা। তারই একপর্যায়ে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে সৈকত হোসেন ওরফে হিরা নামে এক ব্যক্তি তার স্বামীকে কৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপি’র (পদ স্থগিত) সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে আসাদুজ্জামান জনি তাকে মারধর করেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এরপর আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ২ কোটি টাকা পাঠান। টাকা পেয়ে তারা টিপুকে ছেড়ে দেন।
আসমা খাতুন অভিযোগে আরও বলেন, একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে তার স্বামী চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে নওয়াপাড়া বাজারে যাওয়ার পথে সৈকত তার গতি রোধ করেন এবং মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে টিপুকে ধরে জনির কনা ইকোপার্কে নিয়ে আটকে রাখে ও মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারেন, তার স্বামীকে বিএনপি নেতা জনির ইকোপার্কে মুক্তিপণের দাবিতে আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে আসমা সেখানে গেলে জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন দপ্তরী তার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে হামলা চালান এবং তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এরপর শাহনেওয়াজ কবীরের বুকপর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুচাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ করেন আসমা খাতুন।
তিনি বলেন, এ সময় তার স্বামী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে ফোন করে ২ কোটি টাকা দিতে বলেন। সাংবাদিক মফিজের হিসাব নম্বরে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। এ সময় সাংবাদিক মফিজ আরও এক কোটি টাকার দু’টি চেকে জোরপূর্বক টিপুকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর এ বিষয়ে কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেন।
সাংবাদিকদের আসমা খাতুন বলেন, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি ও সাংবাদিক মফিজের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যবসায়ী আমার স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমার স্বামী বর্তমানে ভয়ে এলাকাছাড়া। আমরাও চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি। ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।