
খুলনা প্রেসক্লাবকে রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের হাতিয়ার বানানো মানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা। একজন সাংবাদিকের পরিচয় কেবলমাত্র তার কলম, তার দায়িত্বশীলতা এবং সত্য অনুসন্ধানের সাহস। আমাদের মনে রাখা উচিত, প্রেসক্লাব হলো সবার-ডান, বাম, মধ্যপন্থী কিংবা নিরপেক্ষ-সবার। এখান থেকে কোনো দলের স্লোগান ওঠা শোভন নয়। বরং এখান থেকে প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর, গণতন্ত্রের চেতনা এবং সত্যের জয়গান।
খুলনা প্রেসক্লাব নিয়ে বহু আলোচনা শোনা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন-এখানে দখলদারিত্বের রাজনীতি চলছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। খুলনা প্রেসক্লাব কোনো দলের নয়, কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তিও নয়। এটি খুলনার সাংবাদিক সমাজের অভিন্ন ঘর, সবার মিলনমঞ্চ। এখানে যারা আছেন, তারা একেকজন পেশাদার সংবাদকর্মী। তাঁদের দায়িত্ব হলো সত্যকে তুলে ধরা, মানুষের কণ্ঠস্বরকে রাষ্ট্রের সামনে পৌঁছে দেওয়া। এই দায়িত্ব পালনের জন্য ঐক্য জরুরি, বিভাজন নয়। তাই প্রেসক্লাবকে দখলদারিত্বের নামে কলঙ্কিত করা ঠিক নয়। বরং এটিকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সকলের কর্তব্য।
দলীয় চিন্তাধারা থাকতেই পারে, মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু প্রেসক্লাবে এসে তা যেন সাংবাদিকতার স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ না করে। প্রেসক্লাবের দরজা সব সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত থাকুক। খুলনা প্রেসক্লাব নিয়ে আজ যখন দখলদারিত্বের অভিযোগ উঠছে, তখন অনেকেই উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়-গত ১৫ বছর ধরে যখন একটি গোষ্ঠির হাতে এটি নিয়ন্ত্রণে ছিলো, তখন কেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কেউ ( আজকে যারা সরব) মুখ খোলেনি? তখন কি প্রেসক্লাবের মর্যাদা নষ্ট হয়নি? তখন কি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়নি? সত্য হলো, দীর্ঘ সময় ধরে কিছু ব্যক্তি প্রেসক্লাবকে নিজেদের আধিপত্যের জায়গা বানিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু তখন নীরব ছিলেন অনেকেই-যাঁরা আজ পরিবর্তনের কথা বলছেন।
সেই নীরবতা কেবলই ভণ্ডামির উদাহরণ, যা সাংবাদিকতার নৈতিকতার সঙ্গে যায় না। আজ সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর। প্রেসক্লাব নিয়ে দখলদারিত্বের অভিযোগে গলা ফাটানোর আগে অতীতের নীরবতার দায়ও স্বীকার করতে হবে। না হলে এই আওয়াজ কেবল দলীয় প্রচার মনে হবে, গণমাধ্যমের স্বার্থ নয়।
মিজানুর রহমান মিলটন
সম্পাদক, দৈনিক খুলনাঞ্চল
নির্বাহী সদস্য, খুলনা প্রেসক্লাব