
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কোন সরকারই আমাদের দিকে তাকায় নি, আমাদের ব্যবসাকে গুরুত্ব দেয় নি। বরং সব সরকার আমাদেরকে সব সময়েই নেগলেক্ট করেছে, অথচ একটু নেক নজর দিলেই আমরা দেশের রাজস্বে আরও বেশি বেশি অবদান রাখতে পারতাম। আয়ের অন্যতম সোর্স হতে পারত হোটেল- মোটেল- পর্যটন ব্যবসা। কথাগুলো বলছিলেন নারি উদ্যোক্তা রাজধানীর জনপ্রিয় হোটেল, বিজয় নগরে অবস্থিত থ্রি স্টার হোটেল ৭১” এর সিইও ইয়াসমিন নাহার মুন্নি। খুলনার মেয়ে মুন্নি জীবন যুদ্ধে একজন ফ্রন্ট লাইনের ফাইটার, মরনব্যাধি ক্যান্সার সাথে নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। নিজেকে একটি মুহুর্তের জন্য ক্যান্সারের কারনে অসহায় মনে করেন না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা বানিজ্য, অর্থনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মুন্নি ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য- সংসার নিয়েই আছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘোর সমর্থক মুন্নি সাক্ষাৎকার দেবার সময়ে রাজনৈতিক বিষয় পরিহার করে দেশের চলমান পরিস্থিতি, হোটেল বিজনেস, বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভবনা নিয়ে কথা বলেছেন।
হোটেল ৭১ এ নিজ অফিসে বসে অন লাইন অনলাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে দুই সন্তানের জননী, স্মার্ট ব্যবসায়ী ইয়াসমিন নাহার মুন্নি আক্ষেপ করে বলেছেন, আমলাতন্ত্র, ব্যাংক সেক্টর, এনবিআর, বিমানবন্দরে নাজেহাল- নানামুখী জটিলতা আরও কমাতে পারলে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের অপার সম্ভবনা ছিলো।
অর্থনীতিতে পর্যটনশিল্প দিয়ে রীতিমত বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়া যায়, যেমনটি করেছে ব্যাংকক, মালয়েশিয়া অথচ কোন সরকারই আজ পর্যন্ত পর্যটন শিল্পকে আয়ের অন্যতম খাত হিসেবে গ্রহণ করেনি। তিনি বলেন, প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিটেন্স নিয়ে দেশের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে- হচ্ছে, তেমনি হোটেল, মোটেল, পর্যটন ব্যবসা দিয়ে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের মতোই দেশের অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত / সন্তোষজনক একই সাথে চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা রাখতে পারতো।
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মুন্নি বলেন, গত সরকার যেভাবে ব্যাংক
সেক্টর লুটপাট করেছে, একজন ব্যবসায়ী হিসাবে তাতে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। জুলাই আগস্টের গনহত্যা একজন মা হিসাবে আমাকে পীড়া দেয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিওন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, ভাবতেও অবাক লাগে।
দেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে কিন্তু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কোন পরিবর্তন এসেছে কি? তিনি বলেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের হাহাকার আমরা প্রতিটা ঘর থেকে শুনি, নিম্ন আয়ের লোকজন, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্তরা কেউই ভালো নেই। গত তিন মাসের আন্দোলনে আমাদের হোটেল- মোটেল ব্যবসা অন্তত তিন বছর পিছিয়ে গেছে, ১৫ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলিতে আমরা কোনরূপ ব্যবসা করতে পারিনি, দেশে কোন পর্যটক আসেনি কিন্তু আমাদের ঠিকই ভবন ভাড়া, বৈদ্যুতিক বিল, গ্যাস বিল, স্টাফ পেমেন্ট, মেইনটেইনেন্স সবই বহন করা লেগেছে।
আমাদের হোটেল ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকেই কেউ না কেউ কোন না কোন ব্যাংকে থেকে লোনের টাকায় ব্যবসা করছে, সেই সুদও বসে বসে দেয়া লাগছে। কোন সুবিধা আই মিন সুদ মাফ বা সময় দেয়া হয় নি আমাদের। কোন রূপ প্রনোদনা বা সরকার থেকে কোনরকম নেক নজর আমরা পাইনি, কিছু হলেই গার্মেন্টস, ওষুধ শিল্প বা অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পায়, কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজ পর্যন্ত আমরা কোন সরকার আমলে বা কোন সময়েই পাইনি, করোনায় ক্ষুদ্র, মাঝারি বড় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রনোদনা পেয়েছে, সেই সময়েও আমরা বঞ্চিত ছিলাম।
কথা প্রসংগে তিনি আরো বলেন, আমরা মেনু প্রেজেন্টেশন দিয়ে খাবার সার্ভ করি, খাবারের মূল্য লেখা থাকে, সেই সিস্টেমে সাপোজ এক প্লেট খাবারের মুল্য ৫০০ টাকা, সেটা আগামীকাল বা আগামী সপ্তাহে দ্রব্যমূল্য বাড়ার প্রেক্ষিতে ৬০০ টাকা বা ৬৫০ টাকা হলেও আমরা লস দিয়ে ৫০০ টাকাতেই বিক্রি করছি। অথচ চাল, ডাল তেল, লবন, মসলা, মাছ- মাংশ শাক- সবজি সবকিছুর দাম প্রতিনিয়ই বাড়ছে। দাম বাড়লেও আজকের খাবার প্লেট যেটা ৫০০ টাকা নিচ্ছি, সেটা চাইলেই আমরা ৫১০/ ৫২০ বা সাড়ে ৫৫০ টাকা নিতে পারছি না। ১০০ টাকা বেশি তো দূরে থাক, যদি দশ টাকা বেশি দায় চাই, তবে কাস্টমার সাথে সাথে বলবে গতকালকে না ৫০০ টাকায় খেয়ে গেলাম, আজ কেন বেশি নিচ্ছেন? এটাই বাস্তবতা।
অথচ, কাস্টমার নিজেও জানে, দ্রব্যমূল্য প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনা হোক,৷ আইন শৃঙ্খলা ভালো থাকলে, দেশের মানুষ ভালো থাকবে, দেশের মানুষ ভালো থাকলে হোটেলে এসে মানুষ খাওয়া দাওয়া করবে, দেশের অভ্যন্তরে নানান জায়গায় ঘুরবে।
দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকলে বাইরে থেকে দেশের মানুষ দেশে ঘুরতে আসবে। পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। এই শিল্পের মাধ্যমে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব পাবে। এটা সরকার যত দ্রুত বুঝবে, ততই দেশের মঙ্গল হবে, রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে আমরা কমবেশি সবাই এফেক্টেড হবো।