
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বগুড়ায় তিনটি হত্যাসহ পাঁচ রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু (৬০) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। বিকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি সন্ধ্যায় মারা যান।
চিকিৎসকরা তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিতে পরামর্শ দেন। আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।
বগুড়া জেলা কারাগারের সুপার ফারুক আহমেদ জানান, শুনেছি পথিমধ্যে তিনি বেশি অসুস্থ হলে তাকে সিরাজগঞ্জে এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে বগুড়ায় এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতারের পর তিন আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হলো।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও কমিউনিটি পুলিশিং জেলা কমিটি সদস্য সচিব ছিলেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে তাকে স্বনামধন্য এ কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয়। তার বিরুদ্ধে একের পর এক তিনটি হত্যাসহ পাঁচটি মামলা দেওয়া হয়।
গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে বগুড়া ডিবি পুলিশ তাকে দুটি হত্যা মামলায় মালতিনগর হাইস্কুল রোডের বাসা থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি জামিন পাননি। তিনি জেলে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে বগুড়া জেলা কারাগারের বাথরুমে গোসলের সময় শাহাদৎ আলম ঝুনু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মুখে আঘাত পান। অচেতন অবস্থায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এ ব্যাপারে আইনগত জটিলতা থাকায় অনুমতি দেওয়া হয়নি।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শাহাদৎ আলম ঝুনুকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছিল। বিকালে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
স্বজনরা জানান, পথিমধ্যে সিরাজগঞ্জে তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝুনুকে এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ খবর পাঠানোর সময় স্বজনরা আরও জানান, এখানে মৃত্যু সনদ নেওয়ার পর মরদেহ বগুড়ায় নেওয়া হবে।
শাহাদৎ আলম ঝুনুর একমাত্র ছেলে রিয়াদ উল আলম সামিত জানান, মঙ্গলবার সকালে তার বাবা জেলের বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে যান। বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। গোপনে খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে অচেতন অবস্থায় পেয়েছি।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে (ঝুনু) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হলেও আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। বিলম্ব করা ও অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার পথে রওনা হওয়ায় পথিমধ্যে তার বাবা চিকিৎসার অভাবে মারা যান। সুমিত তার বাবার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
শিক্ষক, রাজনীতি ও সমাজকর্মী শাহাদৎ আলম ঝুনুর অকাল মৃত্যুতে শুধু তার পরিবারে নয়; সহকর্মী, রাজনীতিক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বগুড়া সদর থানা পুলিশ, কারাগার ও অন্যান্য সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার তিনি আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হলো। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ (৬৭) দুটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার হন।
গত ১৫ আগস্ট শিবগঞ্জ থানায় মামলার পরপরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। আবদুল লতিফ গত ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর গভীর রাতে বগুড়া কারাগারে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম রতন (৫৪) মারা যান। তিনি বগুড়া শহরের দক্ষিণ গোদারপাড়ার মৃত কলিম উদ্দিনের ছেলে। বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে একটি বিস্ফোরক আইনের মামলায় তিনি গত ৪ অক্টোবর কারাগারে যান।