
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কঠিন পরিক্ষার মুখোমুখি খুলনা জেলা বিএনপির সদ্য বিদায়ী আহবায়ক আমির এজাজ খান। সরকার পতনের পরে চাদাবাজি- দখলসহ নানাবিধ অভিযোগে বিতর্কিত হওয়ায় এজাজ জেলা বিএনপির আহবায়কের পদ হারিয়েছেন সম্প্রতি। কমিটি ধরে বাতিল হবার পরে নতুন কনিটিতে আসার চেষ্টা করেছিলেন, কাজ হয় নি। সাবেক ছাত্রনেতা ক্লিন ইমেজের অধিকারী মনিরুজ্জামান মন্টু আহবায়ক হয়েছেন। এবার দাকোপ- বটিয়াঘাটা নিয়ে গঠিত খুলনা- ১ আসনে এমপি প্রার্থীতা নিয়ে এজাজ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
২০০১ থেকে এজাজ এই আসনে নির্বাচন করে আসছেন। কাঙ্খিত ফলাফল তুলতে পারেননি আজও, তবে দলকে একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন। জানা গেছে, এই আসনে এবার নতুন মুখ জিয়াউল হাসান পাপুল। বটিয়াঘাটার বিরেটের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। ৯০ এর গন অভ্যুত্থানে পাপুল ফ্রন্ট লাইনের ফাইটার। সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বাধীন ডাকসুতে পাপুল ক্রিড়া সম্পাদক ছিলেন। এরশাদ জামানায় ছাত্রদলকে সংগঠিত করতে যে কয়জন ছাত্রনেতা সক্রিয় ছিলেন, ভয়- ভীতি উপেক্ষা করে দল করেছেন, পাপুল তাদেরই একজন। জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠভাজন।
৯০ এর অধিকাংশ নেতা এখন বিএনপির কি পয়েন্টে আছেন, সেই দিক দিয়ে পাপুল যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। খুলনা বিএবপির রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রক হেলাল- বকুল বা সাতক্ষীরার হাবিবরা সবাই পাপুলের সহযোদ্ধা। এর মধ্যেই পাপুল তার নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করছেন। এলাকার জনগনও পাপুলের খুলনার বাসায় নিয়মিত আসছেন। সমস্যা জানাচ্ছেন, পাপুল তাদের সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। দাকোপ- বটিয়াঘাটায় এর মধ্যেই চাউর হয়ে গেছে, পাপুল নির্বাচন করবেন। সে কারনে দলে দলে লোকজন পাপুলের কাছে ভিড়ছেন। পাপুলকে নেতা মেনে নিয়েছেন। দাকোপ- বটিয়াঘাটা মুলত হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা। বিএনপির জন্য যেটা সব সময়েই নেগেটিভ। ৮০ র দশকে ৮৬ তে এমপি ছিলেন খুলনা জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ। ৮৮ তে এমপি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি নেতা শেখ আবুল হোসেন। ৯১ তে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ হারুন। ৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারী একতরফা নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন বিএনপি থেকে এডভোকেট প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। একই বছরে ১২ জুন নির্বাচনে প্রথমে এমপি হন আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে উপ নির্বাচনে শেখ হারুন মনোনয়ন পেলেও সাবেক হুইপ স্বতন্ত্র প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে তিনি হেরে যান। ২০০১ এ আবারও এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ এ এমপি হন ননি গোপাল মন্ডল। ২০১৪, ১৮ তে এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস বিশ্বাস। ২০২৪ এ এমপি হন আবার আওয়ামী লীগ নেতা ননি গোপাল মন্ডল। ২০১৮ তে বিএনপি খুলনা- ১ আসনে অংশ নিলেও ২০১৪ ও ২০২৪ এ অংশ নেয় নি। অন্য দিকে, ৯১ তে খুলনা- ১ আসনে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির তৎকালীন সভাপতি নুরুল ইসলাম যিনি দাদু ভাই হিসাবে সমধিক পরিচিত ছিলেন। খুলনা মহানগর রাজনীতিতে দাদু ভাই কিংবদন্তী নেতা হলেও খুলনা- ১ আসনের নির্বাচনে মাত্র সাত হাজার ভোট পেয়েছিলেন। জামানত হারিয়েছিলেন। ৯৬ তে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন গাজি আব্দুল বারি। প্রাপ্ত ভোট ছিলো মাত্র চার হাজার।
২০০১ থেকে নির্বাচন করে আসছেন সুন্দরবন কলেজের সাবেক জিএস, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমির এজাজ খান। ২০০১- ৬ ও ২০১৮ তে নির্বাচন করে ৫৬ হাজার ভোট পর্যন্ত পেয়েছিলেন, পরে এজাজ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করে প্রায় ৭৫ হাজার ভোট পান। অন লাইন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমের সাথে আলাপকালে আমির এজাজ খান জানান, উপজেলা নির্বাচনে তাকে জোরপূর্বক হারিয়ে দেওয়া হয়, নতুবা তিনিই জিতে ছিলেন। এজাজ জানান, গত সতেরোটা বছরে তিনি সংগঠনকে একটা সম্মানজনক জায়গায় দাড় করিয়েছেন। দাকোপ- বটিয়াঘাটা মিলে ৭৫ হাজার ভোট বিএনপির জন্য বিশাল ব্যাপার। আসন্ন নির্বাচনে পাপুল প্রার্থী হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান। দলে প্রার্থীতা যে কেউ চাইতেই পারে এমন উত্তর দিয়ে এজাজ আরও জানান, এমন কিছু তিনি শোনেন নি, দল থেকেও কেউ তাকে জানাননি। তিনি নির্বাচনের মাঠে আছেন, কাজ করে যাচ্ছেন, দল করার সুবাদে তিনি মনোনয়ন চাইবেন, বাকিটা হাইকমান্ডের ব্যাপার। দল চাইলে নির্বাচন করবেন, মনোনয়ন না পেলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। অন্য দিকে, পাপুল সমর্থকরা জানিয়েছেন, এলাকার লোকজন এলাকায় পরিবর্তন চায়। নানা কারনে এজাজ পিছিয়ে পড়েছেন, বিতর্কিত হয়ে গেছেন। এই অংশের মতে, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ও বিতর্কে জড়িয়ে জেলা বিএনপির কমিটি ভেংগে যাওয়ায় এজাজের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। নৈতিক ভাবে রাজনীতি থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। অন্য দিকে সম্ভাব্য প্রার্থী এক সময়ের ডকসাইটে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল এই প্রতিবেদককে জানান, এলাকায় তিনি যাচ্ছেন, সেটা নতুন নয়। এলাকার জনগনও তার কাছে আসছেন, নির্বাচন কবে হবে আমরা কেউই সিউর না। প্রার্থী হব কিনা সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। প্রার্থীতা নির্ভর করছে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের পরে। তবে তিমি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।
তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ থেকে এবার প্রার্থী কে হবেন তা কেউই বলতে পারেন নি, সাবেক হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাসের নামে কোন মামলা মোকাদ্দমা এখনো পর্যন্ত হয়নি। তিনি এলাকায় নিজ বাড়িতেই আছেন। সদ্য বিদায়ী এমপি ননী গোপাল মণ্ডল পলাতক আছেন, পঞ্চানন বিশ্বাসের শরীর ঠিক থাকলে তিনি আবারো প্রার্থী হবেন এমনটি জনশ্রুতি আছে। মামলা থাকায় ঝামেলা না হলে সে প্রেক্ষাপটে ননীগোপাল মণ্ডলও প্রার্থী হতে চাইবেন, এর বাইরে আলোচনায় আছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শ্রিমন্ত রাহুল, সাবেক ছাত্রনেতা অসিত বরন বিশ্বাস। তারাও প্রার্থী হতে চাইবেন বলে জানা গেছে।