
মিডিয়া পুরোহিতের সংখ্যার শেষ নেই এখন। তেমন একজন ৯০ সালের আগে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কিছুদিন কাজ করেছেন। ৯০ সালের পর এই ভদ্রলোক বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। গত ১৫ বছর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকা অফিসে গিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা দিতেন সম্পাদকদের । আমাকে অফিসে এসে অনেকবার ফুল দেওয়ার ছবি আছে। এখন আমাদের সমালোচনা করেন।
আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এটিএন বাংলার সংবাদ বিভাগের যাত্রা আমার হাত ধরে। ২৪ বছর আগের কথা। এসটিভি ইউএসের এমডি ছিলাম। বসুন্ধরা মিডিয়া হাউজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম। News 24 Tv, বাংলাদেশ প্রতিদিন , রেডিও ক্যাপিটাল করেছি। লন্ডন , আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশ করেছি। ডেইলি সানের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলাম। শত শত সাংবাদিকের কর্মসংস্হানের ব্যবস্থা করেছি। তুই মিডিয়ার কী করলি এই জীবনে? গত ১৫ বছরের ১০ টা লেখা , ৫টি টক শো দেখা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে । মিডিয়াতে যারা ভাল পদ পদবীতে ছিলো তাদের চাটুকারীতা করতি ফুল নিয়ে গিয়ে।
সম্পাদকদের মধ্য সবচেয়ে বেশি বেতন যারা পেতেন এবং বেতন থেকে সবচেয়ে বেশি যারা কর দিতেন আমি তাদের একজন ( সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী)। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বাইরে আমার কোন ব্যবসা বাণিজ্য ছিল না। এখনো নেই। ইষ্ট ওয়েষট মিডিয়া গ্রুপ বেতনের বাইরে গাড়ি , থাকার আবাসন , বিদেশ গেলে টিকেটসহ সকল খরচ বহন করেছে। বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবীর কোন দেশে আমি এবং আমার পরিবারের কোন সম্পদ কখনো ছিলো না, এখনো নাই । বরং ভয়েস অব আমেরিকায়সহ বিদেশে লিখে বিদেশী অর্থ দেশে এনেছি।
আমার সবচেয়ে সম্পদ দুটি সন্তান । আমার ছেলে এখন এআইইউবির সহকারি অধ্যাপক । ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে তার লেখা প্রকাশ করেছিল ডেইলি সান। আমার মেয়ে হার্ভাডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। আমি মুক্তি যোদ্ধা পরিবারের সন্তান । ফরিদা ইয়াসমিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে তিনবার নির্বাচিত সদস্য, দুইবার যুগম সম্পাদক , দুই বার সাধারন সম্পাদক , দুই বার সভাপতি। কাজ করেছেন ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন কাগজে।
আমার সম্পাদিত কাগজে লেখালেখির কারণে কারাগারে গিয়েছিলেন এমপি গোলাম মাওলা রনি। রনি জেল থেকে বের হয়ে আরেকটি লেখা লেখার পর তার ও আমার বিরুদ্ধে ৫৪টি মামলা হয়েছিলো সারা দেশে। নিয়মিত হাজিরা দিতাম আদালতে। সম্পাদক পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিসাবে ভূমিকা রেখেছি। আইসিটি আইনের বিরুদ্ধে রাজপথেও মানব বন্ধন করেছি। বিবৃতি দিয়েছি। আমার সম্পাদিত কাগজে লিখে দেশ ছেড়েছিলেন ড. তুহিন মালিক। ২০২০ সালে ব্যাংক লুট নিয়ে লীড নিউজের পর আমার এবং পীর হাবিবুর রহমানের ব্যাংক হিসাব তলব হয়েছিলো। দিনকাল সম্পাদক কাজী সিরাজ, ড রেজোয়ান. রাজনীতিবিদ নুরে আলম সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, এহসানুল হক মিলন, খায়রুল কবীর খোকনসহ অনেকে নিয়মিত হাত খুলে লিখেছেন আমার কাগজে । ১৫ বছরে ২৬৭টি মামলা মোকাবিলা করেছি। এখনো অনেক মামলা আছে। ২০১০ থেকে ২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিদিন সাহসি কাগজ ছিলো। ধারাবাহিকতা রাখার বিষয়ে আবারও বলছি দেশে গনতন্ত্র ও বিরোধী দল না থাকলে মিডিয়া অসহায়। বিভিন্নমহল তখন হস্তক্ষেপ করে।
আজ কথা বলা দরকার হস্তক্ষেপ থেকে আগামী দিনের মিডিয়াকে বের করার।
দুনিয়ার সকল দেশেই মিডিয়ার মানুষরা কোন না কোন মত সমর্থন করে। আমেরিকার মতো দেশে Fox এবং সিএনএনের এক পলিসি নয়। বাংলাদেশ অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে ভাল কিছু করুক সেটাই চাই।
মিডিয়াতে ছিলাম। আছি। থাকব। কোন ভুল হলে অবশ্যই শিক্ষা নিব। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ছোট হওয়ার কিছু নাই।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক নঈম নিজামের ওয়াল থেকে