
বিশেষ প্রতিনিধি:
কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুর হত্যাকান্ডের তিন দিনেও সেই সুন্দরী তরুনী বা কিলার গ্রুপের কোন সন্ধান মেলেনি। ৯ ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারে সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল সিগালের সামনে মোটর সাইকেলে আসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন টিপু। ঘটনার পর থেকেই সেই সুন্দরী নিখোঁজ। সিসি ফুটেজে সেই সুন্দরীর ছবি মিললেও সন্ধান মেলে নি তার। একইভাবে খুনিরাও ধরা- ছোঁয়ার বাইরে।
তদন্তকারী সংস্থা কক্সবাজার মডেল থানার পুলিশ ও ছায়া তদন্তে থাকা র্যাবের অনুসন্ধানী দল নিহত টিপু ও গ্রেফতারকৃত আরেক সাবেক কাউন্সিলর চালুর মোবাইল কল লিস্ট থেকে নতুন কোন তথ্য দিতে পারে নি। তদন্তের দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার মডেল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন অন নিউজ পোর্টাল প্রথম সময়কে বলেছেন, অনুসন্ধান চলমান, খুব শিঘ্রি হত্যা রহস্য উদঘাটন হবে।
জানা গেছে, ৯ জানুয়ারি দুপুর ১২ টা নাগাদ কাউন্সিলর টিপু ও চালু ঢাকা থেকে সড়কপথে কক্সবাজার পৌছান। হোটেল গোল্ডেন হিলে তারা ৭০৩ নম্বর রুমে একত্রে উঠেন। দুই রুমের ডিলাক্স সুবিধার রুম এটি। এর পরপরই তারা দুজনই নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে ফোনে ও ভিডিও কলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।
কাউন্সিলর চালুর স্ত্রী রোজিনা পারভিন ইরানি প্রথম সময়কে বলেছেন, এক ঘন্টার মধ্যেই চালু তাকে ফোন করে রুম পরিবর্তনের কথা জানান। কারন হিসাবে চালুর উদ্ধৃতি দিয়ে স্ত্রী ইরানি জানান, টিপু কক্সবাজারে পৌছেই পরিচিত- পুরানো বন্ধু বান্ধবদের খবর দেন, হোটেলে আসতে বলেন। তাস খেলায় বসে যান। যাদের মধ্যে আটককৃত মেজবাউলও ছিলেন।
নানান জায়গায় ফোন দেয়ায় আত্মগোপনে থাকা চালু বেশ বিব্রত হন। টিপুর পরে কিছুটা বিরক্ত হন৷ এর কিছু বাদেই আলোচিত সেই সুন্দরী তরুনী প্রয়াত কাউন্সিলর টিপুর সাথে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ৭০৩ নম্বর রুমে হাজির হন। সেই সুন্দরী রুমে আসায় চালু প্রচন্ডভাবে টিপুর পরে মাইন্ড করেন, রেগে যান। একপর্যায়ে রিসিপশনে ফোন করে এক ফ্লোর নিচে নিজে রুম চেঞ্জ করে ৬০৩ নম্বর রুমে গিয়ে উঠেন। চালু রুম ছাড়ার পরে টিপু, মেজবাউল ও সেই সুন্দরী সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০৩ নম্বর রুমেই ছিলেন। সেখানেই তারা দুপুরের লাঞ্চ সারেন। সন্ধ্যার পরে টিপু সেই মেয়েকে নিয়ে ৭০৩ নম্বর রুম থেকে বের হয়ে একাকী সুগন্ধা পয়েন্টে চলে যান। সেই মেয়ে ভিন্ন দিকে চলে যান। এর পরে রাত আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে অজ্ঞাতনামা যুবকের গুলিতে নিহত হন। টিপু কার ডাকে বান্ধবীকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে একাকী সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়েছিলেন, সেটা এখনও অজানা।
অন্যদিকে, সারা দিনের জার্নি, পলাতক জীবনের নানামুখী টেনশন মাথায় থাকায় লাঞ্চ করেই চালু ৬০৩ নম্বর নতুন রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। টিপু হোটেল থেকে সন্ধ্যার পরে কখন বেরিয়েছে, কখন সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়েছে, কখন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বা মারা গেছে- এর সব কিছুই ছিলো চালুর অজানা। টিপু হোটেল ছেড়ে বের হবার সময়ে কাউন্সিলর চালুকে ইন্টারকম, সেল ফোন বা এক ফ্লোর নিচে নেমেও বলে বের হয় নি।
র্যাব- ১৫ ও হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সাথেও চালুর স্ত্রীর এমন দাবির সত্যতা মিলেছে। হোটেল সুত্র মতে, রিসিপশনের ফোন পেয়েই ঘুমন্ত চালু প্রথম টিপুর খুনের কথা জেনেছে। চালু নিজেও আটকের পরে র্যাবকে জানিয়েছে, টিপু খুনের সাথে তার নুন্যতম সংশ্লিষ্টতা নেই। টিপু কখন রুম বা হোটেল থেকে বের হয়েছে সেটাও ছিলো তার অজানা। টিপুকে খুন করার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকলে ঘটনার পরপরই তিনি পালিয়ে নিরাপদ দুরত্বে যেতেন, হোটেলে থাকতেন না। সেধে গ্রেফতার হতেন না। র্যাবকে দেওয়া চালুর এমন বক্তব্যে তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তুষ্ট, চালুর বক্তব্য তারা আস্থায় এনেছেন।
আলাপকালে চালুর স্ত্রী প্রথম সময়কে জানান, সিসি ফুটেজ চেক করলেই সেই মেয়ের রুমে আসা, রুমে আসার পরে চালুর রুম চেঞ্জ করা, টিপু কখন রুম থেকে বেরিয়েছে, টিপু খুনের পরে সেই মেয়ে টিপুর রুম থেকে কখন বেরিয়েছে, এমন তথ্য সবই জানা যাবে।
র্যাব- ১৫ এর কমান্ডিং অফিসারও এই প্রতিবেদককে বলেছেন, টিপু খুনের সাথে কাউন্সিলর চালুর যোগসুত্র পাওয়া যায় নি। অন্যদিকে, কাউন্সিলর চালুকে যারা চিনেন, খুলনার এমন একাধিক সুত্র বলেছে, চালুর মেয়েলি বদ অভ্যাস নেই, জীবনে সে একটা সিগারেট, এক কাপ চা খান নি। মদ বা অন্য কোন নেশাও তার ছিলো না। কিলিং মিশন বা এমন ডার্টি পলিটিক্সেও সে জীবনে কোন দিন জড়িত ছিলো না, এখনো নেই। সে স্রেফ ঘটনার শিকার।
চালুর স্ত্রী আরও বলেছেন, টিপু নিজেও একজন কাউন্সিলর। সে চালুকে বারবার বলেছে, কক্সবাজার তার পরিচিত। সেখানে তার লবন, চিংড়ি ঘেরের ব্যবসা রয়েছে, পালিয়ে থাকতে কোন অসুবিধা হবে না। ফুল সিকিউরিটি আছে। এমন কথা বারবার শোনার পর চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পালিয়ে থাকার জন্য চালু প্রয়াত টিপুর কথা মেনে নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। নিয়তির নির্মম পরিণতি, যিনি আমার স্বামীকে সিকিউরিটি দেবেন, এমন আশ্বাসে কক্সবাজারে নিয়ে গেলেন, তিনি নিজেই আজ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন।
তবে, টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা খুলনার গনমাধ্যমকে বলেছেন, খুলনার দৌলতপুর, পাবলাকেন্দ্রিক শত্রুরাই আমার ভাই টিপুকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করেছে। আর এর পেছনে সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার চালুর হাত রয়েছে। তারা বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছে। আটককৃত সাবেক কাউন্সিলর ইফতেখার হাসান চালুকে নিয়ে বাদশার এমন বক্তব্য খুলনায় আলোচিত হলেও টিপু হত্যাকান্ডে চালুর হাত আছে বা থাকতে পারে তেমন প্রমান এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
নগরীর দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী গনমাধ্যমকে জানান, গোলাম রাব্বানী টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় আগে হত্যাকাণ্ডসহ দুটি মামলা ছিল। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই। এছাড়া ৫ আগস্টের পরে খালিশপুর থানায় তার নামে মামলা হয়েছে, বলে শুনেছি।
আগামীকালঃ কেসিসি’র সাবেক কাউন্সিলর টিপুর অজানা অধ্যায়