
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ছয় কমিশনের মধ্যে চারটি বুধবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলো হলো-সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন কমিশনের সদস্যরা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের একটা চার্টার (ঐতিহাসিক দলিল) তৈরি করতে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাকি দুই কমিশন-বিচারব্যবস্থা সংস্কার ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন চলতি মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ১ মাস ৩ দিনের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে বহুল আলোচিত ৬টি খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। পরবর্তী তিন মাস অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়। তবে ৪ জানুয়ারি রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয়। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি এবং অন্য ৪টি কমিশনের মেয়াদ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়সীমার মধ্যে বুধবার রিপোর্ট দিয়েছে চার কমিশন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’। এ সংস্কার প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা যেটা গঠন করতে চাচ্ছি, এর উদ্দেশ্য হলো-এটি থেকে গণ-অভ্যুত্থানের একটা চার্টার তৈরি করা, যা হবে নতুন বাংলাদেশের একটা চার্টার। এটি মতৈক্যের ভিত্তিতে তৈরি হবে। তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন হবে, সবকিছুই হবে। কিন্তু চার্টার থেকে সরে আসা যাবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন এই চার্টারের একটা অংশ হবে। নির্বাচন হবে ঐকমত্যের। না হলে চার্টার হারিয়ে যাবে। কাজেই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ তিনি বলেন, এটা শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বহুধরনের বৈঠক হয়। প্রকাশ হয় রিপোর্টও। আনুষ্ঠানিকতা হয়। কিন্তু আজকের আনুষ্ঠানিকতা সেগুলোর অনেক ঊর্ধ্বে। আজকের এ ঘটনা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। কারণ, ইতিহাসের প্রবাহ থেকেই এ কমিশনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির হঠাৎ পুনরুত্থান হয়েছে। মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেখান থেকেই ইতিহাসের সৃষ্টি। আজকের এ অনুষ্ঠান সেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো প্রতিবেদন নয়। তিনি বলেন, যে প্রতিবেদনগুলো আমরা হাতে নিলাম, অবশ্যই এটা আমাদের দেশের জন্য বড় একটি চর্চা। কেউ সেটা অস্বীকার করবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করবে সরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে।