
অনলাইন ডেস্কঃ
গত বছরের জুলাইয়ে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পট পরিবর্তন হয়েছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলটি আর কখনও ফিরে আসতে পারবে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সন্দেহ। যদি ফিরে আসেও, তাহলে সেই ফিরে আসা কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হবে, নাকি আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন অন্য কেউ? এমন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত নিয়েছে বিবিসি বাংলা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রকাশিত ওই খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ত্বে বদল আনার ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের রাজনৈতিক চাপ বা পরামর্শ রয়েছে দলটির ওপর। তবে সেই সমস্ত চাপ ও পরামর্শ উপেক্ষা করেই সামনে এগোতে চাইছে দলটি। আর সেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দলের শীর্ষ পদে শেখ হাসিনার জায়গায় পরিবর্তন আনার কোনো চিন্তা নেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ভেতরে। দেশে -বিদেশে পালিয়ে বা আত্নগোপনে থাকা দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পেয়েছে বিবিসি বাংলা।
আওয়ামী সরকারের পতনের ছয় মাস পার হলেও গণহত্যা এবং দেশব্যাপী গুম-খুনের সংস্কৃতি চালুর জন্য অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না দলটির মধ্যে। উল্টো বিক্ষোভ, অবরোধ এবং এমনকি হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, দলের ওয়েব সাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে এসব কর্মসূচি দিচ্ছেন ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে এই সময় এভাবে কর্মসূচি দেওয়া নিয়ে মনে ক্ষোভ রয়েছে দেশে পালিয়ে থাকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা মনে করেন, দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় না নিয়ে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে; যা আরও হাস্যরস সৃষ্টি করছে।
এছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচারে গুলির জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটিকে আওয়ামী লীগের জন্য বিশাল এক ধাক্কা হিসেবে দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
তবে আওয়ামী লীগ আর কখনোই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না, এমনটা মনে করেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তবে তারা রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না, বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেটা বলা যায় না।
যদিও সরকারের একাধিক উপদেষ্টা বলে আসছেন, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তারা রাজনীতি করতে পারবেন না।
তবে চরম সংকটের মুখেও দলটি কোনো পরিবর্তনের পক্ষে নয়। তারা ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। দেশে ও বিদেশে পালিয়ে থাকা সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এ ব্যাপারে একই অবস্থানে রয়েছেন বলে মনে হয়েছে বিবিসি বাংলার।
নেতাকর্মীদের যুক্তি হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া বিপর্যস্ত দল ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। এমনকি তাদের দলে বিভক্তিও আসতে পারে। দলের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই নেতৃত্ব নিয়ে তাদের বিকল্প চিন্তার কোনো সুযোগ নেই।