
বিশেষ প্রতিনিধি:
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ খুলনা মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তিন জন করে ৬ জন প্রার্থী অন্য দিকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ নেতা প্রার্থী হয়েছেন।
সারা শহরে প্রার্থীদের প্যানা- ব্যানার- ফ্যাস্টুন দৃশ্যমান। নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পরে জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়ামে কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আগামী তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে। ৫০৫ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন।
সূত্রমতে, নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের প্রায় ১৪ বছর পর মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর এডভোকেট শফিকুল আলম মনাকে আহবায়ক, শফিকুল আলম তুহিন সদস্য সচিব ও তরিকুল ইসলাম জহিরকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে প্রথমে ৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০২২সালে ১ মার্চ মহানগর বিএনপির ৭১ সদস্যের পুর্নাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্র।
মহানগর সদস্য সচিব, সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল আলম তুহিন জানান, আহবায়ক কমিটি ইতমধ্যেই নগরীর ৩৪টি ওয়ার্ড-ইউনিয়ন, ৫টি থানায় সম্মেলন সফলভাবে শেষ করেছে। সম্মেলন দেখার জন্য দলের সব পর্যায়ের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উদগ্রীব হয়ে বসে আছে।
সম্মেলনে ভোটাভুটি করতে ইতমধ্যেই খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, বিএনপি নেতা মাসুদ হোসেন রনিকে আহবায়ক, ডা. রফিকুল হক বাবলু, হালিমা আক্তার খানম ও অধ্যাপক সাইদুর রহমানকে সদস্য করে ৪ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সুত্রে জানা গেছে, যাচাই-বাছাই শেষে সভাপতি পদে এড. এস এম শফিকুল আলম মনা, তারিকুল ইসলাম জহির, সাহাজী কামাল টিপু, সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল আলম তুহিন, কাজী মাহমুদ আলী ও নাজমুল হুদা চৌধুরী সাগর এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬ জন যথাক্রমে শের আলম সান্টু, মাসুদ পারভেজ বাবু, মাহবুব হাসান পিয়ারু, হাসানুর রশিদ চৌধুরী মিরাজ, তারিকুল ইসলাম তারিক ও শেখ সাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে, মনা- তুহিন প্যানেলের পাশাপাশি জহির- সাগর দুই প্রার্থী অনেকটা কাছাকাছি হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করছেন। মনা- তুহিনকে বিট দিতে দলের ভেতরে বাইরে অনেকেই জহির- সাগরকে সমর্থন দিয়েছেন, দিচ্ছেন। তবে ভোটের বিবেচনায় মনা- তুহিন সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন, এমন মন্তব্য দলের নেতা-কর্মীদের।
সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী শের আলম সান্টু এই প্রতিবেদককে বলেছেন, যদি কোন অঘটন না ঘটে তবে মনা- তুহিন জুটি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। কারণ হিসাবে সান্টু বলেছেন, সব ওয়ার্ড ও থানা কমিটি এই দুই নেতার প্রত্যক্ষ পরিশ্রমে গঠন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের তথা কাউন্সিলরদের সাথে মনা- তুহিনের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যে যাই বলুক, মন- তুহিনের কঠোর পরিশ্রমের ফসল এবারের সম্মেলন।
আরেক সভাপতি প্রার্থী সাবেক ভিপি জহিরকে সম্ভবনাময় প্রার্থী উল্লেখ করে যুবদল খুলনা মহানগর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সান্টু আরও জানান, জহির যদি আরও আগে সিরিয়াসলি নামতো তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমতো আরো, জহিরের বেরিয়ে আসার সুযোগও ছিলো।
আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, সাবেক ছাত্রনেতা কাজি মাহমুদ বলেছেন, দলের স্থানীয় পর্যায়ে যারা অভিভাবক আছেন, তাদের মোটিভ বা ইচ্ছা এখনও দৃশ্যমান নয়। কি হবে, কারা আসবেন তা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।
কাজি মাহমুদ দলের স্থানীয় অভিভাবক আজিজুল বারি হেলান ও রকিবুল ইসলাম বকুলকে ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চায় তবে মনা- তুহিন আবারও নিশ্চিত আসছেন এটা বলা যায়। আর যদি কোন অঘটন ঘটে তাহলে বড় ধরনের চমক থাকতে পারে। সব কিছুই এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।
দলের খুলনার রাজনীতিতে আরেক নীতি নির্ধারক, ডাকসুর সাবেক নেতা, নগরীর বানরগাতির বাসিন্দা, ধানের শীষ প্রতীকে খুলনা- ১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশি জিয়াউর রহমান পাপুল বলেছেন, একটা ভালো সম্মেলন সফল ভাবে হতে যাচ্ছে, এটাই এখন বাস্তবতা।
তিনি জানান, বেশ কয়েকজন প্রার্থী হয়েছেন, নিজ নিজ বক্তব্য নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা করছেন, এটা বিউটি অব ডেমোক্রেসি। খুলনার সম্মেলন সারা দেশেই বিএনপির রাজনীতিতে একটা মডেল হয়ে থাকবে। খুলনা বিএনপির একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে এই সম্মেলনের সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন ৯০ এর এরশাদ বিরোধী সফল গন অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন ছাত্রদলের সোনালি অতীত জিয়াউর রহমান পাপুল।
সম্মেলনের প্রস্তুতির বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা এই প্রতিবেদককে জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা সার্কিট হাউজে খুলনা মহানগর বিএনপির ‘স্মরণকালের সেরা’ সম্মেলন হবে। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সকাল ১০ টায় উদ্বোধনী বক্তব্য, বিশেষ অতিথির বক্তব্য, প্রধান বক্তার বক্তব্য, প্রধান অতিথির বক্তব্য ও প্রথম অধিবেশনে সভাপতির সমাপনি বক্তব্যে মধ্যে দিয়ে প্রখম অধিবেশন শেষ হবে।
বিকাল সাড়ে তিনটায় দ্বিতীয় অধিবেশন কাউন্সিল খুলনা জেলা স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো জানান, একদিকে কাউন্সিল চলবে, অন্যদিকে সার্কিট হাউজের সম্মেলন স্থলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন আলাপকালে জানান, কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথিসহ প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম হবে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে। সম্মেলন হবে বর্ণাঢ্য। ইতিমধ্যে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরো জানান, সম্মেলনের সব বিষয়ে মনিটরিং করছেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ও তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারি হেলাল।