
অনলাইন ডেস্কঃ
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণির এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অচেতন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে ২৪ ঘণ্টা পরও তার জ্ঞান ফেরেনি।
এ ঘটনায় শিশুটির বোনের জামাই ও তার শ্বশুরকে আটক করেছে পুলিশ।
শিশুটির চাচার দাবি, বড় বোনের শ্বশুরই তাকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। তাৎক্ষণিকভাবে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানা গেছে, রোজায় স্কুল বন্ধ দেওয়ায় মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। সেখানেই বৃহস্পতিবার সকালে ধর্ষণের শিকার হয় সে।
শিশুর মা জানান, ঘটনার সময় শিশুটি ছাড়া কেউ ঘরে ছিল না। এই সুযোগে কেউ একজন ঘরে ঢুকে শিশুটিকে ধর্ষণ করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে যায়। পরে বড় মেয়ে বাড়ি এসে তাকে অচেতন অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শিশুর পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মাও হাসপাতালে আসেন।
হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক শিরিন সুলতানা জানান, মেয়েটির নিম্নাঙ্গে ক্ষতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। পাশবিক নির্যাতন চালানোর কারণে মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী জানান, যে বাসায় শিশুটি বেড়াতে এসেছিল, ধারণা করা হচ্ছে, সেখানেই ঘটনা ঘটেছে।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম জানান, শিশুর ধর্ষণের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা দেওয়া হয়নি। তারপরও পরিবারের প্রাথমিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিশুটির বোনজামাই এবং বোনের শ্বশুরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এছাড়া থানায় কারা কী উদ্দেশে হামলা চালিয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক:
শিশুটিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, শিশুটিকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। শুক্রবার রাত ৯টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও চিকিৎসকের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা তার চাচা বলেন, আমার ভাতিজি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। বৃহস্পতিবার সকালে বোনের শ্বশুর তাকে একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর গুরুতর অবস্থায় ঢামেকে আনা হয়।
থানা ঘেরাও বিক্ষোভ: এদিকে জুমার নামাজের পর ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে মাগুরা শহরের নোমানী ময়দান এবং ভায়নার মোড় থেকে দুটি গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমাবেশ করে থানা ঘোরাওয়ের ঘোষণা দেয়। পরিস্থিতি উপলব্ধি করে থানার সদর গেট বন্ধ করে দেওয়া হলে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সাদা কাপড়ে আরবি অক্ষর খচিত ব্যানার নিয়ে ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীরা থানায় হামলা চালানোর পর মাগুরা জেলা বিএনপি, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকর্র্মীকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে দেখা যায়। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত কিছু শিক্ষার্থীকেও সেখানে দেখা যায়। এ সময় তারা ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
থানা ঘেরাও ও হামলার বিষয়ে জেলা জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম বলেন, মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী এবং পারনান্দুয়ালী এলাকার একটি চিহ্নিত গ্র“প যারা অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলাফেরা করেছে তারাই থানায় পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছে।
মাগুরা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য রাতুল বলেন, একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি হোক চাই। আমরা ধর্ষকের বিচার চেয়ে শহরে মিছিল করেছি। কিন্তু থানায় হামলার সঙ্গে কারা জড়িত সেটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই।