
অনলাইন ডেস্কঃ
‘কোনদিন বিয়ে করব না!’ এমন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ এই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করি। ১৪ মার্চ কনে দেখার পর থেকে ঘোর লেগেছিল এবং ৪/৫দিন পর শ্বশুড় এবং খালু শ্বশুড়কে জানিয়ে দিলাম ‘বিয়ে করতে রাজী, তবে ২৬ মার্চ বিয়ে করতে চাই’।
কনে দেখার কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে করার দিন বলে দেওয়ায় তারা বিব্রত হলেন। আকদ (আংটি পড়ানো) করার কথা বললে আমার সাফ জবাব ছিল-বিয়ে হলে ২৬ মার্চ হবে, নইলে হবে না। ঐদিকে আমার শ্বাশুড়ি, নানী শ্বাশুড়ি ও তার বোনের ঘোর আপত্তি আমাকে নিয়ে (পরে জেনেছি)। নানী শ্বাশুড়ি আমাকে ‘গুন্ডা’ এবং তার বোন ‘ভূয়া সাংবাদিক’ বলে শ্বাশুড়ির কান ভারি করে দেন। শ্বশুড় ও খালু শ্বশুড় আমাকে খুব পছন্দ করে ফেলেছিলেন। আমাকে ২৩ মার্চ জানিয়ে দেয়া হয়-বিয়ে হবে। তখন আমার পকেটে বেতনের ৫ হাজার টাকা অবশিষ্ট! মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! কী করা, ২০/২২ জনের বরযাত্রার আয়োজন করি।
বিয়ের কেনাকাটা সামান্য এবং সবকিছুই বাকীতে ক্রয় করতে হয়েছিল। ফুলের তোড়া, মুরগী, নারকেল, মিষ্টি, পায়ের স্যান্ডেল অবধি বাকীতে কিনি! শ্বশুড়বাড়ির শর্ত ছিল-বিয়ে করার (শরা-কাবিন) পর বউ তুলে নেয়ার আগ অবধি আসা-যাওয়া করা যাবে না। ২৬ মার্চ বিয়ের ঘোরের রেশ নিয়ে ফিরে আসি নিজের বাসায় এবং এরপর থেকে ‘বিয়ে’ নিয়ে ভাবনা ও ভয় মনে ছড়াতে থাকে। প্রতিজ্ঞা ভাঙার জন্য মনটা কেমন করতে থাকে। এরমধ্যে নিজ এলাকায় নানী শ্বাশুড়ির সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, বউ আমাকে দেয়া হবে না। এ কথা শুনে আমারতো আরো বেহাল অবস্থা! কেন বিয়ে করতে গেলাম-এমন অনুশোচনা হতে লাগল। আমি ঘটক (মহল্লার ছোট ভাই) স্বপনকে ধরলাম। একদিন ও কৌশল করে আমাকে শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে গেল। এদিন বউ (হলুদ রঙের কামিজ পরিহিত) আমার সামনে যখন আসল, আমি চিনতে পারছিলাম না। চোখে যেন শর্ষে ফুল দেখছিলাম। মনে হচ্ছিলো, শ্যামলা রঙের বউ কেন গৌরবর্ণ দেখাচ্ছে? বউ বদল করে দেয়নি তো-ভাবছিলাম।
বউ প্রথমে জানতে চাইল আমি সত্যিই সাংবাদিক কিনা। ‘হ্যাঁ’ বলতেই আইডি কার্ড দেখতে চাইল। আমি মানিব্যাগ থেকে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার আইডি কার্ডটি বের করে দিলাম। সে আমার আইডি কার্ড নিয়ে অন্দরমহলে চলে গেল এবং ফিরল হাসিমুখে।
শ্বশুড়বাড়িতে মাঝেমাঝে যাবার অনুমতি পাওয়া গেল। অতিথি যেমন যায়, ওরকম যেতে লাগলাম। নানী শ্বাশুড়ির একটা কথা মনে মনে ভাবতাম, তিনি বলেছিলেন-’আমার নাতনীরে তুই পাবি না!’ তিনি ভারতে ‘খাজা বাবা’র দরবারে যেতেন। আমি মানত করে ফেললাম-বউ নিয়ে সংসার করতে পারলে খাজা বাবা’র দরবারে দু’জনে যাব। হা হা হা। বিয়ের ২০ বছর পর অবশ্য ওখানে গিয়েছি।
আজ আমাদের বিয়ের ২৮ বছর। নানী শ্বাশুড়ি বেঁচে নেই। তবে আমাকে পরে খুব পছন্দ করেছিলেন।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক দর্পণ কবিরের ওয়াল থেকে