
অনলাইন ডেস্কঃ
আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কুয়েটের শিক্ষকরা একাধিকবার শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও সাড়া দেয়নি তারা। অনশন কর্মসূচিতে থাকা ২৭ জন শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে গত সোমবার বিকেল ৪টা থেকে ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দায় আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন ৩২ জন শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থী আজিমুল হক সিয়াম কিছুটা অসুস্থ বোধ করলে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক এসে তাকে স্যালাইন দেন। পরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে ভর্তি করা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে জোহরের নামাজ পড়ার সময় অনশনরত শিক্ষার্থী সাদিক সিদ্দিক ফারিব অজ্ঞান হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে ও পরে নগরীর বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার রাতে ২ জন শিক্ষার্থী কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের অভিভাবকরা এসে তাদেরকে নিয়ে যান। এছাড়া একজন শিক্ষার্থীর মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালেও শিক্ষার্থীরা সাড়া দেননি। বিকেলে উপ-উপাচার্য অনশনস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
অনশন না করলেও দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অনশনস্থলের পাশে দিনভর অবস্থান করেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বর থেকে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অনশনস্থলে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুধবার ইউজিসির টিম কুয়েটে আসবে বলে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে তারা বলেন, আগামীকাল আসবে কেন, তাদের আসা উচিত আজ রাতের মধ্যেই। তারা কি শিক্ষার্থীদের খারাপ অবস্থা হওয়ার পর আসবে?
মঙ্গলবার স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ২৭ জন ছাত্র মেঝেতে তোষক বিছিয়ে কেউ বসে আছে, কেউ শুয়ে আছে। পাশে কয়েকটি স্ট্যান্ড ফ্যান রয়েছে। সেন্টারের সামনে কুয়েটের ৩টি অ্যাম্বুলেন্স রাখা আছে। পাশের কক্ষে অবস্থান করছে একটি মেডিকেল টিম।
অনশনরত শিক্ষার্থী রাহাত, তৌফিক, গালিব ও মহিবুজ্জামান উপল বলেন, উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। প্রয়োজনে জীবন দেবেন। শিক্ষার্থীদের জীবনের চেয়ে কি উপাচার্যের চেয়ার বড়?
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা হামলা করলেও কুয়েট প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হামলাকারীদের নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা একটি মামলা করেছে কুয়েট প্রশাসন। হামলার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
তারা বলেন, কিছুদিন আগে বহিরাগত একজন বাদি হয়ে ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কুয়েট কর্তৃপক্ষ ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এর মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীও রয়েছে। উপাচার্যের কাছে বারবার দাবি জানালেও তিনি তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করেননি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা গত ১৩ এপ্রিল ক্যাম্পাসে ঢুকে হল খুলে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ২ রাত তারা খোলা আকাশের নিচে থাকার পর ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে হলে ঢোকেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ তাদের দাবি পূরণের উদ্যোগ নেয়নি। তাই তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
এ ব্যাপারে কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। তাদেরকে অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। তারপরও আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
এদিকে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এক ফেসবুক স্টাটাসে জানিয়েছেন, কুয়েটের শিক্ষার্থী আন্দোলন ইস্যুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। উনি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন। আগামীকাল ইউজিসি থেকে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কুয়েটে যাবেন। তারপর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অনশনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, কুয়েট ভিসিকে অপসারণ করতে হবে। অথবা তাকে নিজ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। খুলনায় যে গরম এখানে প্রায় ৪৫ ডিগ্রির মতো তাপ অনুভব হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা কতক্ষণ বেঁচে থাকব জানিনা।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের জানিয়েছেন কাল কুয়েটে তদন্ত কমিটি আসছে। আমরা এই তদন্ত কমিটির নিন্দা জানিয়েছি। ভিসিকে অপসারন না করে তদন্ত কমিটি কেন আসবে।
এদিকে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের পরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক অনশন ভাঙার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেন। এসময় তারা জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙানোর চেষ্টাও করেন। তবে শিক্ষার্থীরা সাড়া দেননি।