
অনলাইন ডেস্কঃ
মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার শুনানি শেষ করে, ওসি প্রদীপ ও পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়েছে এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন জানান, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান। এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) তদন্ত শেষে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড ছাড়াও স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ কুমার দাশ তার কর্মকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেকনাফে এক ভয়ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি তথাকথিত ক্রসফাযেেরে অন্তত ১৪৫ জনকে হত্যা করেছেন ও ক্রসফায়ার বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, এমনকি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় এক নারীকে জমি দখলের চেষ্টা করায় প্রদীপ বরখাস্তও হয়েছিলেন। এসপি মাসুদের মতো অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাসহ কালো টাকার মালিকরা শত বাধা দেওয়া সত্ত্বেও প্রায় ১৮ মাসব্যাপী বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার রায় প্রদান করেন।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে পলাতক ফ্যাসিস্টদের দোসর ইয়াবা ব্যবসায়ী বদিদের মত অপরাধী ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির দীর্ঘদিনের সংশ্লিষ্টতা ছিল, যা বিচার কার্যক্রমকে বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত করেছে। তাই আমরা জুডিশিয়ারি, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিস্পষ্ট বার্তা দিতে চাই—রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি, প্রলোভন-রাজনৈতিক চাপ যেন আপনাদের প্রভাবিত করতে না পারে।
এদিকে গত ২৩ এপ্রিল মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি শুরু হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পাঁচ দিন পর ২০২০ সালের ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে এ মামলা করেন।
পরবর্তীতে একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় র্যাব। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা এবং সাগর দেবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। বাকি সাত আসামি খালাস পান। পরে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা আপিল করেন।