
বিশেষ প্রতিনিধি:
খুলনা মহানগর মহিলা দলের কমিটি ভেঙে দেয়ায় আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। সত্যের জয় হয়েছে। দলের সবাই খুশি। একটা বড় ধরণের অপশক্তির হাতে সাধারণ নেতা-কর্মীরা জিম্মি হয়ে পড়েছিলাম। সেটা থেকে আমরা সবাই এখন মুক্ত। মহানগর মহিলা কমিটি ভেঙে দেয়ার পর এভাবেই টেলিফোনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন সদ্য বিদায়ী কমিটির সদস্য শাহানা রহমান।
বিদায়ী কমিটির সভাপতি আজিজা খানম এলিজার দিকে ইঙ্গিত করে আলাপকালে শাহানা জানান, শুক্রবার বিকেলে দলের মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা আসিফা আশরাফি চুমকিকে তার পেটোয়া বাহিনী বেদমভাবে দলীয় কার্যালয়ের নিচে পেটায়। ঘটনার পরে দলের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে রাতে কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। শাহানা হামলার নেতৃত্বে থাকা শারমিন- রেশমি- পুতুলকে অবিলম্বে দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানান।
শাহানা জানান, তিনি কিছু হাইব্রিড নেত্রিকে সাথে নিয়ে মহিলা দলের মধ্যে একটি বড় ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। তাদের কারণে দল ঘরে বাইরে চরমভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল। দলের সবাই তাদের কারণে সব সময়ে আতঙ্কিত থাকতো। এলিজা নিজেই মাস্তান বাহিনী পুষতো। যখন তখন যাকে তাকে অপমান- অপদস্ত করতো। শুক্রবারে কোন কারণ ছাড়াই দলের চুমকির পরে হামলা হয়। তর্কের খাতিরে ধরেই নিলাম চুমকি অপরাধী, কিন্তু তার মানে তো এই না যে চুমকিকে প্রকাশ্যে মারতে হবে। হামলা করতে হবে।
চুমকি যদি কোন অপরাধ করে থাকতো, সেটা দলীয় ফোরামে এলিজা তুলতে পারতো। মূল দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে বিচার চাইতে পারতো। কিন্তু সেটা না করে প্রকাশ্যে চুমকিকে দলীয় কার্যালয়ের নিচে মারধর করা হয়েছে। এর আগেও আমাকে বিজয় দিবসের র্যালিতে প্রকাশ্যে মিছিলের মধ্যে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে। একজন নারীর জন্য এটা অত্যান্ত অপমানজনক। খুব দুঃখজনক।
শাহানা জানান, আমরা কেউই দলের কর্মচারী না। এখানে আমরা সবাই সহকর্মী, সহযোগী কিংবা সহযোদ্ধা। কিন্তু এলিজা গংদের আচরণে মনে হয়, আমরা দাসী- বান্দি বা গার্মেন্টসের কর্মচারী, আর ওরা আমাদের মালিক। তিনি বলেন, এলিজা ও তার বাহিনী সবসময় অন্য মেয়েদের সাথে বসিং ভাব করতো। কমান্ড করে কথা বলতো। অজানা আতঙ্কে দলের মেয়েরা কার্যালয় আসতে ভয় পেত। কিংবা দলীয় কার্যালয়ে সাধারণ মেয়েরা ভয়ে আসছে না। মানসম্মানের ভয়ে অনেক ভালো মেয়ে দলীয় কার্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এলিজা গংরা দলের সাধারণ মেয়েদের সাথে চাকর বাঁকরের মতো ব্যবহার করতো। সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে পদ শূন্য থাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুন্নাহার লিপি সন্তানের মা হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে থাকার কারণে বিদায়ী সভাপতি আজিজা খানম এলিজা নিজেকে অসীম ক্ষমতাধর মনে করেছিলেন। ফলে তিনি মহিলা দলে একচেটিয়া ব্যাটিং করতে থাকেন। তিনি একাধারে সভাপতি একাধারে সাধারণ সম্পাদক আবার নিজেকে সাংগঠনিক সম্পাদক এসব মিলিয়ে নিজেকে শেখ হাসিনার মত ক্ষমতাধর মনে করতেন। তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ সম্পাদকের শুন্য চেয়ার এলিজা নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গঠনতন্ত্র মতে কোন যুগ্ম সম্পাদককে দায়িত্ব দিতে দেন নি।
শাহানা আশা করেন, মহিলা দলের কমিটি বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়ে দল রাহু মুক্ত হয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক শ্রদ্ধেয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারি হেলাল ও জিয়াউর রহমান পাপুল কমিটি বিলুপ্ত করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত আমাদের অসহায় নেতা কর্মীদের জন্য সম্মানজনক মেসেজ। তারা আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। এখন ভালো পরিবারের মেয়েরা দল করবে, দল করতে উৎসাহিত বোধ করবে।
আমরা আশা করি খুব শিঘ্রি মহানগর বিএনপির দুই কান্ডারী শফিকুল আলম মনা ও শফিকুল আলম তুহিনের পরামর্শ, দিক নির্দেশনা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সুচিন্তিত মতামতে সাধারণ নেতাকর্মীদের সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে মহিলা দলের নগর কমিটি গঠিত হবে।