
বিশেষ প্রতিনিধি:
তিন মাস পার হলেও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা কে পুনর্বহালের যোগদান সংক্রান্ত দাফতরিক চিঠিকে কোন গুরুত্বই দেয় নি খুলনা সিটি করপোরেশন। রাজস্ব বিভাগে ওয়াহিদুজ্জামান খানকে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পুনর্বহালের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে এই চিঠি দেয়।
পাশাপাশি অতিরিক্ত সচিব, নগর উন্নয়নকে চিঠিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একই অফিস আদেশের অনুলিপি খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, খুলনা সিটি করপোরেশনের সচিব, খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বরাবর দেয়া হয়। জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম রেজাউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে স্মারক নম্বর ০৩০০২৬৯০.০৮২.০৪৬.১৩.২৪.১৪৪ তারিখ ১৩/ ০২/ ২০২৫ খুলনা সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগে জনাব মো: ওয়াহিদুজ্জামান খানকে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে পুনর্বহালের পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে চিঠি পেয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, সিটি করপোরেশন- ২ শাখার উপসচিব ফিরোজ মাহমুদ স্বাক্ষরিত স্মারক নম্বর- ৪৬.০০.০০০০.০৭১.১৮.০৬০.১৭.১৯৪ এক চিঠিতে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় কর্তৃক প্রেরিত পত্র এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হলো। উক্ত পত্রের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
চিঠির অনুলিপি অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন অনু বিভাগ) স্থানীয় সরকার বিভাগ, যুগ্ম সচিব (নগর উন্নয়ন- ১ অধিশাখা, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিচালক, (প্রশাসন), প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের একান্ত সচিব বরাবর দেয়া হয়।
এই চিঠি প্রাপ্তির কথা গত সপ্তাহে সেলফোনে আলাপকালে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম স্বীকার করে সরকার নিযুক্ত প্রশাসকের সাথ কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের (যিনি একই সাথে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার) সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিভাগীয় কমিশনার অফিসে মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
সেল ফোনে আলাপকালে প্রথমে তিনি বিষয়টি জেনে উত্তর দেবেন বলে জানান। একইসাথে তিনি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠির কপি তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় তাকে ফোন দিতে অনুরোধ করেন। পরে গত দুই দিনে দফায় দফায় ফোন দিলেও তিনি আর ফোন ধরেন নি, ফোন ব্যাকও করেন নি। হোয়াটসঅ্যাপে তার বক্তব্য চেয়ে ম্যাসেজ পাঠালেও তিনি সেটারও উত্তর দেন নি।
এদিকে, ভুক্তভোগী ওহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ৫ আগস্টে সরকার পতনের পরে সিটি করপোরেশনের ১১ তম গ্রেডে শিক্ষা অফিসার হিসাবে কর্মরত তাসাদুজ্জামান তাসাদ বিএনপিপন্থী সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে নিয়ে তাকে লাঞ্চিত করে তার চেয়ার দখল করে নেয়। সেই থেকে আজও তিনি এই পদে বহাল আছেন।
তাসাদ বিরোধী সূত্র বলছে, তাসাদ সিটি করপোরেশনে ১১ তম গ্রেডের কর্মকর্তা অথচ ৫ আগস্টের পর থেকে বর্তমানে তিনি নবম গ্রেডের চেয়ার দখল করে রেখেছেন, এমন ঘটনা সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এমন সূত্র আরও জানিয়েছে, তাসাদ এক সময়ে বাকশাল ছাত্রলীগ করতো। আওয়ামী ঘরানার নেতা হিসাবে তাসাদ শহরে একজন পরিচিত মুখ। এখনো সে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যদিও ৫ আগস্টের পর থেকে সে বিএনপি হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে আসছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তাসাদ ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী ধারায় রাজনীতি করে আসছে। বিএনপিতে অফিশিয়ালি আজও সে যোগ দেয় নি।
সূত্র মতে, গত পনের বছর আওয়ামী লীগের শাসন আমলে সিটি করপোরেশনে সে নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবেই পরিচয় দিয়ে কাজ করেছেন। এমন কি মুজিব কোট পরেই সে সেই সময়ে অফিস করতো। প্রতিটা ১৫ আগস্ট ঘটা করে পালন করেছে। মেয়র খালেকের সাথে বহরে অসংখ্যবার টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করতে গেছে। সিটি করপোরেশনে চাকরিরত অন্যান্য সব কর্মকর্তাদের চাকরির শেষ জীবন বা তারিখ উল্লেখ থাকলেও তাসাদ কবে অবসর নেবে সেই ঘর এখনো ফাঁকা রয়েছে, অভিযোগ তাসাদ বিরোধীদের।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত তাসাদ এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আলোচিত ওয়াহিদুজ্জামান আর তিনি এক সময়ে এই চেয়ারের জন্য প্রার্থী ছিলেন। প্রতিহিংসা-ঈর্ষা থেকে তিনি এই ধরণের গেম খেলছেন৷
প্রধান উপদেষ্টার দফতর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই চিঠিকে তাসাদ বেআইনি বলে দাবি করেছেন। ৫ আগস্ট থেকে এই চেয়ার দখল করার কথা অস্বীকার করেছেন আসাদ। আলাপকালে তাসাদ জানান, ওয়াহিদুজ্জামান বিভিন্ন জায়গায় দৌড় ঝাপ করে এই চিঠি ইস্যু করিয়েছেন। তাসাদ আরও বলেছেন, বিষয়টি একটি মীমাংসিত বিষয়। তবে তিনি এমনও বলেছেন, অফিসের সবাই এই চিঠির পক্ষে সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা ওয়াহিজুজ্জামানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
পরবর্তী পর্বঃ সাবেক মেয়র খালেকের কাছ থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখনো বহাল, খুলনা সিটি করপোরেশন তারাই চালাচ্ছে।