
বিশেষ প্রতিনিধি:
আবারও আলোচনায় খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। জানা গেছে, সদর আসনের সাবেক এমপি, বিএনপির হেভিওয়েট নেতা, জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন আলি আজগর লবি খুলনা- ৫ আসনের প্রার্থী হিসাবে কাজ শুরু করায় তুহিন প্রার্থী হবার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো।
খুলনা- ১ আসনের জন্য প্রার্থী হিসাবে কাজ করছেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল এই প্রতিবেদককে বলেছেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে হোক আর স্বেচ্ছায় হোক, সাবেক এমপি আলি আজগার লবী খুলনা সদর আসন থেকে সরে গিয়ে খুলনা পাঁচ আসনে নিজেকে এনগেজ করেছেন, এটা তুহিনের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো খবর। তুহিনের মাথার উপর দিয়ে একটু বড় ফাড়া পার হলো। পাপুল আরও বলেছেন তুহিন এর জন্য শুভকামনা রইল। প্রার্থী হতে তুহিন এক ধাপ এগিয়ে গেল, সামনে আর কোন বড় বাঁধা রইল না।
সূত্র বলছে, প্রার্থী হিসাবে খুলনা সদর আসনে সাবেক এমপি, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু আছেন। খুলনার রাজনীতিতে মঞ্জু একটি জনপ্রিয় নাম। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন দলের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন। দলের হাইকমান্ড তার উপরে বিরক্ত।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করায় তার সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ চলে যায়। মঞ্জু তখন থেকেই ভিন্ন অবস্থান নিয়ে আছেন, পরে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ক্ষমা চাইলেও আজ অবধি মূল ধারায় ফিরে আসতে পারেন নি।
জানা গেছে, এর বাইরে প্রার্থী হতে চান, সাবেক আরেক জনপ্রিয় ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম জহির। কিন্তু জহির রাজনীতির চেয়ে নিজের ব্যবসায়ের দিকে বেশি ব্যস্ত এমন চাউর আছে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।৷ অন্যদিকে, খুলনা বিএনপির রাজনৈতিক অভিভাবক হিসাবে পরিচিত সাবেক ছাত্রদল নেতা বকুল- হেলাল ও পাপুলের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল আলম তুহিন। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মধ্য দিয়ে সাবেক ছাত্রনেতা তুহিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও বর্তমানে যথেষ্ট আস্থাভাজন।
সূত্র বলছে, মঞ্জুকে অব্যাহতি দেয়ার পর থেকে সেই সময়ে দলের মহানগরের হাল ধরেন সারাজীবন জেলা বিএনপির রাজনীতি করে আসা সাবেক কাউন্সিলর এডভোকেট শফিকুল আলম মনা ও কমার্স কলেজ ছাত্রদল থেকে উঠে আসা তথা একদম তৃণমূল থেকে উঠে আসা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি অনলবর্ষী বক্তা, শফিকুল আলম তুহিন।
প্রথমে মহানগর শাখার সদস্য সচিব, পরে কাউন্সিল করে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মধ্য দিয়ে তুহিন দলে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। প্রার্থী হিসাবে খুলনা- ২ অর্থাৎ সদর আসনে তুহিন এখন রীতিমতো ফ্যাক্টর। নেতা-কর্মীরা তুহিনকে সব সময়েই পায় এটা দলের মধ্যে ওপেন সিক্রেট। পাশাপাশি দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা তুহিনের বাসার দরজা নেতা-কর্মীদের জন্য সব সময়েই খোলা। তুহিনের স্ত্রী সাবেক ছাত্রদল নেত্রি লাকি নিজেও মানবিক গুণের অধিকারী। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই লাকির পরিচিত। যার কারণে, নেতা-কর্মীরা তুহিনের বাসায় গেলে লাকির আতিথেয়তা কিংবা সাহচর্য পেয়ে যথেষ্ট কমফোর্ট ফিল করে থাকে।
গেলো রোজার মাসে তুহিন খুলনা- ২ আসনের অন্তর্ভুক্ত সকল ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিলে যেমন যোগ দিয়েছিলেন তেমনি প্রতিটি ইফতার মাহফিলে তুহিন নিজ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য সহযোগিতা করে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিলেন। নিজেকে ইতিমধ্যে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে প্রমান করেছেন।
দলের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আলি আজগর লবির মতো ধনাঢ্য হেভিওয়েট প্রার্থী সরে যাওয়াতে তুহিন অনেকটা রিলাক্সড মুডে আছেন। মঞ্জু বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন এমনটি আশাবাদ করলেও দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা বলেছেন, বিএনপিতে মঞ্জু অধ্যায় শেষ। মঞ্জু বিএনপিতে আর ব্যাক করতে পারছেন না।
রোজার ঈদের আগে দলের মহানগর সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, বিএনপিতে মঞ্জু গ্রুপ বলে কোন গ্রুপ নেই। এখানে একটাই বিএনপি। যেটার সভাপতি আমি, তুহিন সাধারণ সম্পাদক। যে কমিটিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাক্ষর করেছেন। দলের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এই কমিটি নির্বাচিত।
এদিকে, অসমর্থিত একটি সূত্র বলেছে, তুহিনকে ঠেকাতে দল ও দলের বাইরে অবস্থিত একাধিক নেতা জিয়া পরিবারের কাউকে খুলনা- ২ আসনে প্রার্থী করার পথে হাটছেন। তাদের টার্গেট বিএনপি থেকে মঞ্জ মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হলে তুহিনকে হারাতে মঞ্জু নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এমন কথা মঞ্জু গ্রুপের নেতা আরিফুজ্জামান অপু স্বীকার করে বলেছেন, মঞ্জু ভাই প্রার্থী হবেনই।
সূত্র বলছে, কোন কারণে যদি মঞ্জু দল থেকে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হন সেক্ষেত্রে খুলনা সদর আসনের জন্য তারেক রহমান কিংবা তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান কিংবা জিয়া পরিবারের সন্তান প্রয়াত আরাফাত রহমানের কোকোর স্ত্রী শর্মিলি সিথি রহমানকে প্রার্থী করতে দলের ভেতরে বাইরে একাধিক নেতা তৎপরতা শুরু করেছেন। এর বাইরে বিএনপি থেকে একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম প্রার্থী হতে পারেন, এমন গুঞ্জন রয়েছে, তবে এসব গুঞ্জনের সত্যতা পাওয়া যায় নি।