
অনলাইন ডেস্কঃ
ঈদের ছুটি শেষে আগামী রোববার থেকে খুলবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে ফিরতে আগে ভাগেই রওনা দিয়েছেন অনেকে। যাত্রীরা ট্রেন, বাস থেকে নেমে ব্যাগ-লাগেজ হাতে নিয়ে ছুটছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার খোঁজে। কেউ সরাসরি কর্মস্থলের উদ্দেশে, কেউবা বাসায় ফিরছেন। ফলে সপ্তাহের বেশি সময় ফাঁকা থাকা নগরী ফের কোলাহলমুখর হতে শুরু করেছে।
দেখা গেছে, ফেরত আসা যাত্রীদের এবারের ঈদযাত্রা ছিল তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক। একই চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনেও। সকাল থেকেই ট্রেনে চেপে যাত্রীরা চট্টগ্রামে ফিরেছেন। গত ৭ জুলাই দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষে টানা ১০ দিনের ছুটি চলছে সরকারি অফিস-আদালতে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ফেনী থেকে আসা বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, কোরবানি ঈদ করতে পরিবার নিয়ে বাড়িতে গিয়েছি। প্রতি বছর দুই ঈদে যাওয়া হয়। এবার ঈদ যাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক। কোনো ধরনের অঘটন ঘটেনি। ঈদ আনন্দ শেষে পরিবার নিয়ে শহরে ফিরেছি। আগামী রোববার থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত দুই দিন ধরে যাত্রীরা ফিরতে শুরু করলেও আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার নগরীতে ফেরার মূল চাপ থাকবে। যাত্রীদের ফেরা নিরাপদ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর থেকে আসা রেলযাত্রী বিউটি আক্তার বলেন, ঈদে বাড়ি যেতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। রেলওয়ে পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল। রেলস্টেশনে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিলাম এমন দিনও গেছে। তবে এবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল। ঈদ শেষে সহিসালামতে পরিবার নিয়ে শহরে আসতে পেরেছি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম শহীদুল ইসলাম বলেন, এবারের ঈদে রেল ভ্রমণে যাত্রীদের স্বস্তির যাত্রা উপহার দিতে পেরেছি। এখন বাড়ি থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছেন। আমরা সক্রিয় রয়েছি। আমাদের সঙ্গে এপিবিএন পুলিশ, আনসার ও আরএনবি সহযোগী রয়েছেন। ঈদের প্রথম ট্রেন যাত্রা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোনো ছিনতাই, মলম পার্টি, শয়তানের নিঃশ্বাস ইত্যাদি চক্রের চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে কোনো ঘটনা নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে নগরীর নতুন ব্রিজ, একে খান গেট ও অক্সিজেন, কদমতলী, শুভপুর বাসস্ট্যান্ডে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস এসে পৌঁছাচ্ছে একের পর এক। প্রতিটি বাসেই ছিল যাত্রীদের ভিড়, সবার চোখে-মুখে ঈদের আনন্দের রেশ। যাত্রীরা বাস থেকে নেমে ব্যাগ-লাগেজ হাতে নিয়ে ছুটছেন সিএনজি অটোরিকশার খোঁজে।
একে খানে সৌদিয়া বাস যাত্রী মো. মিশকাত হোসেন বলেন, তিনি কুমিল্লা থেকে উঠেছেন। কোরবানি ঈদ করতে গত বৃহস্পতিবার বাড়ি যান। মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। গ্রামের মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ভাড়া সামান্য বেশি। লোকাল বাসগুলোতে যাত্রীর ভিড় বেশি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রহিম মিয়া বলেন, নগরীতে ঈদ আমেজ কাটতে শুরু করেছে। মানুষ বাড়িঘর থেকে ফিরছে। ঈদের পর থেকে কোম্পানির ইনকাম তুলতে কষ্ট হয়েছে। বাড়তি কোনো টাকা নিয়ে বাসায় ফিরতে পারিনি। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভাড়ার বাজার আগের চেয়ে অনেক ভালো।
সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল রহিম বলেন, আমার থানাধীন শুভপুর বাসস্ট্যান্ড এবং কদমতলী বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। দুই বাসস্ট্যান্ডে সবসময় নজরদারিতে রয়েছে। এছাড়া একটি ঘাটও রয়েছে। সেখানেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। টহল টিমও জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহমুদা বেগম বলেন, ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো ছিল। আমাদের পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছে। ঈদ উপলক্ষে আমাদের যে বেইজ গঠন করা হয়েছিল তাদের সোমবার থানায় এবং লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে ট্যানারি এলাকায় আমাদের বিশেষ নজরদারি রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো চুরি, ছিনতাই, নাশকতা ইত্যাদির খবর নেই। প্রতিটি থানার পুলিশ সদস্যরা তাদের রুটিন মোতাবেক কার্যক্রমে ফিরবেন।