
অনলাইন ডেস্কঃ
গত শুক্রবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নজর ছিল সবার। নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বৈঠকটি সম্পন্ন হয়। অবশ্য শীর্ষ দুই ব্যক্তির রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং যৌথ বিবৃতি ঘোষণার বিষয়ে আপত্তি তুলেছে বেশকিছু রাজনৈতিক দল। মূলত ওই বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য নতুন সময় নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে প্রক্রিয়ায় সমঝোতা হয়েছে এবং সেটি যেভাবে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলগুলো। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও। বিশেষত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল খুশি হতে পারেনি। এ বিষয়ে তারা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর আপাতদৃষ্টিতে ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট উত্তরণ’ হয়েছে বলে মনে করা হলেও কার্যত সংকট কতটা দূর হয়েছে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক জটিলতা এখনো কাটেনি, বরং সামনের সময়ে ‘রাজনৈতিক মেরূকরণ আরও জটিল’ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এক্ষেত্রে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরে ছাড় দিয়ে হলেও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের ভিন্নমত নেই। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের সমঝোতায় তারা অখুশিও নন। বরং সরকার কেন শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দিল, সেটি নিয়ে তাদের প্রশ্ন। এ ধরনের ঘটনাকে তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে মনে করেন। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার এবং সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেননা, নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করা। শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা তার নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। সরকার এভাবে একটি দলের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দিতে পারে কি না এবং সেটি কতটা নৈতিক, তা নিয়ে যদি কিন্তু থেকেই যায়। নির্বাচন সত্যিই ফেব্রুয়ারিতে হবে কি না, তা নিয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করছেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের এক সপ্তাহের মাথায় গত শুক্রবার লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হলো যখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছিল। অতঃপর আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক শেষে ‘যৌথ বিবৃতিতে’ বলা হয়েছে—‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে নির্বাচন হতে পারে।’ অর্থাৎ বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট হতে পারে। ফলে লন্ডন বৈঠক নিয়ে দেশের জনগণের মাঝে যে কৌতূহল ও উৎকণ্ঠা ছিল, সেটারও অবসান হয়েছে। অবশ্য শর্ত সাপেক্ষে নির্বাচনের নতুন সময় নির্ধারণ করার বিষয়ে রাজনীতিতে নানামুখী সন্দেহ এবং সমালোচনা ডালপালা মেলছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। এর মধ্যেই গত ৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর গত শুক্রবার ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে যে, ‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে নির্বাচন হতে পারে।’ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট হতে পারে।
সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জামায়াতের প্রশ্ন
লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি মনে করে, প্রধান উপদেষ্টা গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তার ওই ঘোষণার পর লন্ডন সফরকালে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয়। এর মাধ্যমে তিনি (ড. ইউনূস) একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা মনে করি, দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে তার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল। গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয় বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুপুরে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াতে ইসলামী।
ইসলামী আন্দোলনের অভিমত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে সাধুবাদ জানালেও যৌথ বিবৃতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, শুক্রবারের বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ডিসেম্বর থেকে সরে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টাও শর্তসাপেক্ষে তা বিবেচনার কথা বলেছেন। নিজস্ব অবস্থানকে যৌক্তিক কারণে পুনর্বিবেচনা করার এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে শীর্ষ দুই নেতার বৈঠকের পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারের উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের শব্দ প্রয়োগকে বিস্ময়কর আখ্যা দিয়ে আতাউর রহমান বলেন, ড. ইউনূস বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তারেক রহমান একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। এ কথা সত্য, তারেক রহমান দেশের রাজনীতির একক প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাদের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হলেও আক্ষরিক অর্থে এটা দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে একজন রাজনৈতিক নেতার সংলাপ; কিন্তু প্রেস ব্রিফিংয়ে বার বার ‘যৌথ বিবৃতি’ বলা বিস্ময়কর। একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রের ‘যৌথ বিবৃতি’ প্রদান শোভনীয় না।
বৈঠকে সংস্কার ও বিচার গুরুত্ব না পাওয়ায় হতাশ এনসিপি এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ-সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি। শুক্রবার রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত পাঠানো এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ-সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়—নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণঅভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন-আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে। জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে, তা জনগণ মেনে নেবে না। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন-সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আপত্তি লন্ডনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, সিনিয়র নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, যে কোনো গঠনমূলক সংলাপ ও আলাপ-আলোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচনকালীন প্রক্রিয়া, বিচারিক অগ্রগতি ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা নীতিগতভাবে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব হচ্ছে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করা। তাই কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা তার নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামীতে আরও সতর্ক ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিএনপির মন্তব্য লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ‘একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন’ বলে জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তার জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি গতকাল কালবেলাকে বলেন, শুধু বিএনপি নয়, দেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের দাবি ছিল রোজা, আবহাওয়া ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে এপ্রিলে নির্বাচন সম্ভব নয়। তাছাড়া কোনো দলের প্রতি অনুরাগ নয়; বরং ২০২৬ সালের রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে জামায়াতের আমির যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের নতুন সময়সীমা সামঞ্জস্যপূর্ণ। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বৈঠক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তাতেই বলা আছে যে জামায়াতের আমির গত ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ২০২৬ সালের রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। ফলে লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে ঘোষণা, তা জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নতুন রাজনৈতিক দলটি (এনসিপি) লন্ডন বৈঠকের ঘোষণাকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় দৃষ্টির ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তাদের আরও অভিজ্ঞতা অর্জনের পরামর্শ থাকবে।
সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে: ড. মাহবুব উল্লাহ
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ গতকাল বলেন, বৈঠক নিয়ে দেশের মানুষের মাঝে বিরাট প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল। দেশের কিছু লোক অবশ্য চেয়েছিল যে, বৈঠকটি না হোক। তবে তাদের হতাশ করে দিয়ে লন্ডনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর তারেক রহমানের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখেই বুঝা যায় যে, তিনি নিজেই বৈঠক নিয়ে বড় ধরনের আশা এবং আস্থা পোষণ করেন। নিঃসন্দেহে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বেশকিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তো শুধু সংক্ষিপ্ত খবর জেনেছি। অর্থাৎ মোটা দাগে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে আনার বিষয়ে ড. ইউনূস একমত পোষণ করেছেন। তবে তিনি সব প্রস্তুতি সাপেক্ষে কথাটি বলেছেন। যদিও সেটি ঠিক কোনো শর্ত নয়। এত বছর পর এত বড় একটি নির্বাচন করতে হলে তো প্রচণ্ড প্রস্তুতির দরকার আছে। বিশেষত পুলিশ বাহিনী তো ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের বিরাট ভূমিকা থাকে। রিটার্নিং অফিসার থাকেন ডিসিরা। তাদের অনেককে নিয়েও মানুষের সন্দেহ আছে। সুতরাং একটি প্রশাসনিক পরিবর্তন নির্বাচনের আগে দরকার হবে। এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশন তাদের প্রস্তুতি নেবে। ফলে সম্ভাব্য সময়টাকে তো উড়িয়ে দিতে পারি না। সরকারের হাতে ৬-৭ মাস যে সময় আছে, তাতে তারা প্রস্তুতি নিতে পারবে।
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার সব গুছিয়ে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করাটা অসম্ভব কিছুই নয়। এ জন্য উভয়পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। বোঝাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। যেমন ড. ইউনূস এপ্রিল থেকে সরে এসেছে। তারেক রহমান ডিসেম্বর থেকে সরে এসেছে। এভাবে একটা আপস রফা হয়েছে আরকি। এটাকে অভিনন্দিত করতেই হবে। এটা যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা কিছু মহল দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইছে।
সূত্রঃ কালবেলা