
অনলাইন ডেস্কঃ
যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়… স্নেহের মামুন রেজা, ব্যুরো প্রধান চ্যানেল ২৪ ও দৈনিক সমকাল। কয়েকদিন আগে চ্যানেল ২৪ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান শেষে ওর অফিসে বসে দীর্ঘ আড্ডা দিয়েছিলাম। অনেক অনেক কথা বলেছিল সেদিন মামুন।
কি বলবো? দীর্ঘ যুগের সম্পর্কে ও কখনো হাসিমুখ ছাড়া কথা বলেছে কি না মনেই করতে পারিনা। খুলনার যে কোন সমস্যায় বক্তব্য নেয়ার প্রয়োজনে মামুন ফোন করে সালাম দিয়েই বিনয়ের সাথে বলতো ভাই একটু কষ্ট দেবো, কোথায় আসবো বলেন। বেশির ভাগ সময়ে আমিই বলতাম, কোথায় আসলে ভালো হয় বলো?
অনেক সময় আলাদা আলাদা সমস্যা নিয়ে আলাদা আলাদা ফুটেজ এর জন্য একটু বেশি সময় দরকার হলে খুবই আবদারের সাথে বলতো ভাই অনেক গুলো পয়েন্ট নিয়ে বাইট নেবো, একটু বেশি সময় নেবো কিন্তু? একবার এক ঈদের আগেরদিন ফোন দিয়ে বললো ভাই সারা বাংলাদেশের তিনটি বনেদি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরিবারের ঈদ আনন্দ নিয়ে বড় এপিসোড। আমরা কিন্তু পুরো টিম নিয়ে আপনার বাড়ি আসবো ঈদের পরদিন।
অথচ কি আশ্চর্য যতদিন চ্যানেল ২৪ এ কথা বলেছি, মামুন, তুষার আর ওদের সহকারীকে হাজার বার অনুরোধ করেছি একটু আপ্যায়নের এমনকি এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়াতে পারিনি কাউকে। অথচ মামুন সেদিনও ওর অফিসে অনেক আপ্যায়ন করলো। ঋণী থেকে গেলাম মামুন। বিনয় এবং পেশাদারিত্বের মিশেলে এক অনন্য প্রতিভা মামুন।
পেশাগত বিষয়ে তার পথ পরিক্রমায় হয়তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিবাদ থাকতে পারে। কারণ মামুন বেশ কয়েকবার খুলনা প্রেসক্লাবের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলো। সেক্ষেত্রে তার হয়তোবা বিভিন্ন সাংবাদিকদের সাথে মতবিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু বিরোধ কখনো হয়েছে এমনটা আমার জানা নেই। কারণ ওকে আমি দেখেছি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে।
নিউজ নিয়ে আমি যতদূর জানি নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছে সে। গত সরকারের আমলে মেয়র এবং শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস খুব কম মানুষের ছিলো। বিশেষ করে তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে বেশিরভাগ সময় আমাকেই কল দিতো মামুন। মামুন আর কখনো ফোন দেবে না।
গতরাতে একটা প্রোগ্রামে ছিলাম, তখনই খবর পেলাম মামুন রেজা হার্ট অ্যাটাক করে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজে ইন্তেকাল করেছে। প্রোগ্রাম শেষ করেই ছুটে গেলাম ওর বাসায়। রাত ১২.৩০ টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, কারণ ওর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবে। মামুনের পেশাদারিত্বের বাইরে অসাধারণ একটা সুখী পরিবার ছিলো ওর। স্ত্রী ও একমাত্র পূত্র জাওয়াদ ছিলো ওর জীবনের বড় অবলম্বন। অনেক বড় স্বপ্ন ছিলো জাওয়াদকে নিয়ে।
শুক্রবার ভোর রাতেই খুলনা পৌছেছিলো পরিবার সহ সিংগাপুর থেকে। রাতে অফিস ও করেছে। বাসায় ফিরে যতদূর শুনলাম গ্যাসের ব্যাথার ট্যাবলেট ও খেয়েছে। এরপর হঠাৎই পড়ে যায়। তার এক সহকর্মী জানালো, সে সম্ভবত পড়ে গিয়েই চিরবিদায় নিয়েছে। কারণ খুব দ্রুততম সময়ে তারা খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজে পৌছেছিলো এম্বুলেন্স নিয়ে।
এটাই আল্লাহর বিধান, মাত্র ৪৪ বছর বয়সে বহু মানুষকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলো মামুন রেজা। তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয়, “এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণের মাঝে তুমি করে গেলে দান”। গত আতে খুলনার গুরুত্বপূর্ণ বহু মানুষ গভীর রাতে জানাযায় উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছে মামুন রেজা সবার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় একজন মানুষ ছিলো।
আল্লাহ ওকে বেহেশত নসীব করুন!
লেখক: শাহ মামুনুর রহমান তুহিন
প্রেসিডেন্ট গ্লোবাল খুলনা।