
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের ৮০ শতাংশের বেশি আয় আসে তৈরি পোশাক থেকে। এক বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির পাইপলাইন হিসেবে পরিচিত এ শিল্পটি নানান সমস্যায় জর্জরিত। চলমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে এ শিল্প নতুন করে বড় ঝুঁকিতে পড়েছে। জাহাজের পণ্য পরিবহনে বিলম্ব হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
ফলে ক্রয়াদেশ বাতিলের ঝুঁকি, মূল্যছাড় দিতে বাধ্য হওয়া বা বাজার হারানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়াসহ নানান ঝুঁকিতে পড়েছে এ খাত।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের প্রধান গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ দেশে পণ্য পৌঁছাতে সুয়েজ খাল ব্যবহার করা হয়। পরিবহন ব্যয়ের ক্ষেত্রে যা সাশ্রয়ী।
এতে সময় বাঁচে অন্তত ১৫ দিন। এই রুট ব্যবহার করতে না পারলে বিকল্প দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ইউরোপে যেতে হয়। এতে অতিরিক্ত সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময় লাগে বাড়তি ১৫ দিন।
বাড়ে পরিবহন ব্যয়ও। সাধারণত ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা পরিবহন ব্যয় বহন করে থাকে। তবে বাড়তি ব্যয় শেষ পর্যন্ত রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের ওপরই চাপানো হয়।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বৈশ্বিক বাণিজ্য ও উৎপাদনে নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। ট্রাম্পের ট্যারিফজনিত ধাক্কা সামলানোর পর এমন একটি সংঘাত সরাসরি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।
এরই মধ্যে জ্বালানি খাতে মূল্যবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে, শিপিং খরচ বেড়েছে এবং উৎপাদনেও প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে, যার প্রভাব স্টক মার্কেটেও দৃশ্যমান। তিনি বলেন, বিশ্ব জ্বালানির এক-তৃতীয়াংশ উৎপন্ন হয় মধ্যপ্রাচ্যে। হরমুজ প্রণালি যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে, যা অর্থনীতিতে বিরাট চাপ সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের পরিবহনের পাশাপাশি সুয়েজ খাল হয়ে বিপুল পরিমাণ বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন হয়। এই পথ ব্যবহারে বাধা তৈরি হলে জাহাজগুলোকে আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ হয়ে ঘুরে যেতে হবে। এতে সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়বে। এই বাড়তি পথ পাড়ি দিতে সময় প্রায় ১৫ দিন বেশি লাগবে। আর শিপিং খরচ প্রতি কনটেইনারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও ইউনাইটেড ফোরামের প্যানেল লিডার মোহাম্মদ মফিজ উল্লাহ বাবলু বলেন, ‘আমাদের শিপিং খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিমানের খরচ ডাবল হয়ে যাচ্ছে। শিপিংয়ের লিড সময় আগে ছিল ২৫ থেকে ২৬ দিন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ দিন। এখন সে সময় ৬০ দিনে চলে যাচ্ছে। জাহাজের সময় বাড়ায় এ শিল্পের জন্য একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানিতেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ফলে কাঁচামালের ঘাটতি তৈরি হবে। যার ফলে পোশাকের খরচ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও এ শিল্প ঝুঁকিতে পড়বে। ’
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘আমাদের জ্বালানির প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে। ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে এলএনজির সরবরাহ বিঘ্ন ঘটবে। অন্য কোথাও থেকে এলএনজি কিনতে হলেও দাম বেড়ে যাবে। যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বাড়ছে। দাম আরও বাড়বে এতে আমাদের অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে। ফলে কনটেইনার ও জাহাজের খরচ বাড়বে। এর ফলে পোশাকের দাম বাড়বে। পোশাকের দাম বাড়লে পশ্চিমারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেবে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন