
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় বাংলাদেশে নতুন গণতন্ত্র পুনর্গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে গণসংহতি। জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের এক অভূতপূর্ব বিজয় সাধিত হয়েছে। আসন্ন ৫ম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে দলের সদস্য নবায়ন ও সংগ্রহ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল । এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। সংবাদ সম্মেলনে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কতগুলো স্পষ্ট ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ছিল, সেই প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষিত হয়নি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি গুলি বাস্তবায়িত হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার বিপরীত স্রোতে বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে। সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়নে জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণসংহতি আন্দোলন
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সম্মেলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন এবং গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে রাজনৈতিক দল আকারে আত্মপ্রকাশ করে গণসংহতি আন্দোলন।
এই সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি প্রধান সমন্বয়কারী ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম নির্বাহী সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালের ২৯, ৩০ ও ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন। ‘ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলুন’ এই আহ্বান নিয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন থেকে জোনায়েদ সাকিকে প্রধান সমন্বয়কারী পুনর্র্নিবাচিত এবং আবুল হাসান রুবেলকে নির্বাহী সমন্বয়কারী নির্বাচিত করে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়।
বিগত ফ্যাসিবাদী আমলের পুরোটা সময় জুড়ে রাজপথে ও রাজনীতিতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে ক্রমাগত লড়াই করেছে গণসংহতি আন্দোলন। ২০২১ সাল থেকে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম জারি রেখে ২০২২ সালে যুগপৎ ধারায় ঐক্যবদ্ধ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে ছিলাম আমরা। যে আন্দোলনের পরিবর্তীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে জনগণের আন্দোলনে পরিণত হওয়া আন্দোলনের এক অভূতপূর্ব বিজয় সাধিত হয় ২০২৪ সালের
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের পর বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারকে শুরু থেকেই সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করে, অপরাপর রাজনৈতিক দলের সাথে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে নিয়ে এবং জনগণকে সাথে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাংখা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গঠনে নিরলস কাজ করে চলেছে গণসংহতি আন্দোলন। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন ও শহীদদের স্মরণে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। ৪ জুলাই , জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মেলন।
৫ জুলাই গণসংহতি আন্দোলনের তরুণ জুলাই যোদ্ধাদের নতুন বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও বিশেষ জাতীয় বর্ধিত সভা। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলায় জুলাই সমাবেশ। ২৫ জুলাই ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ। ১ আগস্ট শহীদ জুলফিকার শাকিলের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ।
৪ আগস্ট জুলাই- আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসুচির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে গণসংহতি আন্দোলন ।
অর্ন্তবতীকালীন সরকারকে আমরা আহ্বান জানাই ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সকল শক্তিকে বিশেষত শহীদ পরিবার ও আহতদের সাথে নিয়ে অভ্যুত্থানের বার্ষিকী পালনের বিশেষ উদ্যোগ নিতে।
গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিগুলোর পাশাপাশি জুলাই ও আগস্ট মাসে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির উদ্যোগে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানের আকাংখাকে কেন্দ্র করে দলীয় অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
লিখিত বক্তব্যে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য গণসংহতি আন্দোলনের সকল নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান। এসময়ে তিনি গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।