
অনলাইন ডেস্কঃ
রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে দলীয় কোন্দল, নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষমুখর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন এবং ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলামকে সংগঠন থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কমিটি অনুমোদনের মাত্র আট দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (২০ জুন) রাতে প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম দলীয় পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান।
পরদিন শুক্রবার (২১ জুন) দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলামকে অব্যাহতি এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
পদত্যাগপত্রে রাশেদুল ইসলাম লেখেন, “যথাযথ শ্রদ্ধা এবং ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি।”
তিনি আরও লেখেন, “দলের হয়ে কাজ করাটা আমার জন্য গর্বের, কিন্তু ব্যক্তিগত কারণে এখন আমার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো প্রয়োজন।”
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে নগরের একটি রেস্তোরাঁয় জেলা কমিটির এক বৈঠকে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ অনুযায়ী ওই রেস্তোরাঁয় উপস্থিত থাকাকালীন ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমকে প্রকাশ্যে লাথি মারেন। ফিরোজকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে কেন্দ্রীয় কমিটি দ্রুত ব্যবস্থা নেয় এবং নাহিদুলকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেয়।
এরপর শুক্রবার বিকালে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদুল নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক দাবি করে বলেন, “জেলা কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তি আছেন যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। এটা শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি।”
এদিকে, সমন্বয় কমিটি গঠনের পর থেকেই রাজশাহী জেলা ও মহানগর ইউনিটের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর ককটেল হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে মাত্র ২৭ জন নেতা-কর্মী অংশ নেন, যেখানে শুধু জেলা ও মহানগর কমিটিতেই পদধারী নেতা ছিলেন অন্তত ৪৩ জন। মহানগরের অনেকে ওই কর্মসূচিতে অংশই নেননি।
দলীয় অস্থিরতা সামাল দিতে শুক্রবার রাজশাহী পৌঁছান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। শনিবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, “আমি রাজশাহীতে এসেছি। সবার সঙ্গে কথা বলছি। রাতে আবার বসব। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রধান সমন্বয়কারীর পদত্যাগপত্র এখনো গৃহীত হয়নি, সেটি বিবেচনায় রয়েছে।”
পদত্যাগের বিষয়ে রাশেদুল ইসলাম বলেন, “আমি পদত্যাগ করেছি, তবে এনসিপির সঙ্গেই আছি। রাজনীতি কখনো করিনি, হঠাৎ এসে মনে হচ্ছে বড় পদ আমার জন্য নয়। পদত্যাগের বিষয়ে বুধবার রাতের ঘটনার প্রভাব কিছুটা ছিল, তবে সেটিই একমাত্র কারণ নয়।”
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।