
অনলাইন ডেস্কঃ
কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে মাত্র দুইদিনে ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে জমেছে ১৪ হাজার ৩৭১টি রপ্তানি কনটেইনার। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব রপ্তানি কনটেইনার যাওয়ার কথা ইউরোপ কিংবা আমেরিকাতে।
শনিবার (২৯ জুন) ও রোববার শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় ৩ হাজার ৬০০ ট্রাক ও কার্ভাডভ্যানের জট তৈরি হয়েছে ডিপো ও বন্দরের আশপাশে। এরই মধ্যে ৩ হাজার ৬৮০ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার রোববার জাহাজে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন রপ্তানিকারকরা। পণ্যবোঝাই এসব কনটেইনার নিয়ে তিনটি জাহাজ রোববার চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করার কথা ছিল।
পুরো একদিন বন্দরে অলস বসিয়ে রেখে আজ সোমবার ফের এই কনটেইনারগুলো জাহাজে উঠানোর চেষ্টা করছেন রপ্তানিকারকরা। দুপুর ১২টায় সেই তিনটি জাহাজসহ মোট পাঁচটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার সিডিউল রয়েছে।
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে রোববার রাত থেকে রপ্তানি কনটেইনার শুল্কায়নের কাজ শুরু করেছেন কাস্টম কর্মকর্তারা। সেই হিসেবে সোমবার থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে আমদানি কার্যক্রমও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কর্মসূচি স্থগিত হলেও যে জট তৈরি হয়েছে সেটি স্বাভাবিক হতে অন্তত এক সপ্তাহ বাড়তি সময় লাগবে। এখন জাহাজ কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা না করলে এসব রপ্তানি পণ্য পাঠাতে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে তাদের।
এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে গত ১২ মের পর থেকে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে বিঘ্ন ঘটেছে সেবায়। ভোগান্তিও বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। এমন অবস্থায় শীর্ষ ১৩টি ব্যবসায়ী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতারা গত দুদিন সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ করে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারে বাধ্য করে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এনবিআর হলো দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা। বাজেটের ৮৮ শতাংশের বেশি রাজস্বের জোগান দেয় এনবিআর। আগামী অর্থবছরে বাজেটের ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে এনবিআরকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের টানা কর্মসূচিতে এটা হোঁচট খেয়েছে। আবার বন্দরে রপ্তানি পণ্যের যে জট তৈরি হয়েছে তাতে করে নির্ধারিত সময়ে পণ্য পাঠাতে হিমিশিম খেতে হবে আমাদেরও।’
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘কাস্টম কর্মকর্তারা না আসায় ডিপোতে শুল্কায়ন কার্যক্রম টানা দুইদিন বন্ধ ছিল। রোববার রাত থেকে রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়ন আবার শুরু হলেও এরই মধ্যে ১৪ হাজার ৩৭১ একক রপ্তানি কনটেইনার জমে গেছে ডিপোতে। বাইরে রপ্তানি পণ্য নিয়ে অপেক্ষমান আছে আরও প্রায় ৩ হাজার ৬০০ ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান। গতকাল রোববার বন্দর জেটিতে থাকা তিনটি জাহাজ ৩ হাজার ৬৮০ একক রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে শনিবার ও রোববার কোনো কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠাতে পারিনি আমরা। সেই তিনটি জাহাজ রোববার দুপুরে বন্দর ত্যাগ করবে। আমরা এই সময়ের মধ্যে কনটেইনারগুলো উঠানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য প্রথমে কারখানা থেকে চট্টগ্রামের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। সেখানে শুল্কায়নের পর কনটেইনারে রাখা হয় সব পণ্য। পরে বুকিং অনুযায়ী বন্দরে এনে জাহাজে তুলে দেওয়া হয় রপ্তানি পণ্য বোঝাই কনটেইনার। যে ১৪ হাজার কনটেইনার জমেছে সেগুলো জাহাজে তুলতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। কারণ, প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ রপ্তানি কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আসবে নতুন কনটেইনারও। এখনই ডিপোর চারপাশে অপেক্ষমান গাড়ি আছে ৩ হাজার ৬০০।’