
অনলাইন ডেস্কঃ
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৪৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। এটি চলতি বর্ষা মৌসুমে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড। এছাড়া আজ পটুয়ালীতে ২৪৮, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ২২৫, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৬৬, ভোলায় ১৫৪, নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১৪৪ ও কক্সবাজারের টেকনাফে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন রাজধানীতে বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ২৪ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, মঙ্গলবার রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী ছাড়া সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীতে টানা বৃষ্টিতে নানামুখী ভোগান্তির মুখে পড়েন নগরবাসী। দুপুরের দিকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হলে একদিকে যানজট, অন্যদিকে গণপরিবহন সংকটে নগরবাসীকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
বৃষ্টির কারণে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ সব যানবাহনের সংকট দেখা দেয়। চালকরা একদিকে যেমন দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন, অন্যদিকে অনেকেই বৃষ্টিতে চলাচল করতে অনীহা প্রকাশ করেন। ফলে গণপরিবহনে চাপ বেড়ে যায়। টানা বৃষ্টিতে ট্রাফিক ব্যবস্থায়ও নেমে আসে বিশৃঙ্খলা। বৃষ্টি শুরু হলে অনেকেই নিয়ম না মেনে যেদিকে পারছেন, সেদিকেই গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে ট্রাফিক পুলিশেরও ভোগান্তি বাড়ে।
দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলিস্তান, তাতীবাজার, জিরোপয়েন্ট, পল্টন, বাংলামোটর, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, বিজয়স্মরণী, মিরপুর ১, ১০, ১১ নম্বর এলাকায় বৃষ্টির মধ্যেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। রিকশা, বাস, সিএনজিসহ সব যানবাহন ধীরগতিতে চলতে দেখা যায়। এতে রাস্তায় চলাচলকারী মানুষকে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। বিকাল ৩টার দিকে সচিবালয় ও প্রেসক্লাব এলাকায় দেখা যায় শত শত মানুষ মেট্টোস্টেশনের নীচে আশ্রয় নিতে। এসময় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের জবুথবু হয়ে মেট্রোরেলের নীচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। ফুটপাতে দোকানিদের অনেকেই গত দু-দিন দোকান খুলতেই পারেননি। কেউ খুললেও নেই তেমন বেচাকেনা।
রাজধানীর অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কোনো এলাকায় বিশেষ করে পুরান ঢাকায় রাস্তায় হালকা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমের এক দিনে সর্বোচ্চ ৪৪৪ মিলিমিটার অতি ভারী বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে যায় ফেনী শহরের বেশির ভাগ সড়কে। এতে দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে বিপৎসীমার কাছাকাছি ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি। মুহুরী নদীর পাড় ভেঙে ফুলগাজী এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান নদীতে বিলীন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শহরের জনজীবন একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা আর অবিরাম বৃষ্টির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা। এরই মধ্যে ফেনীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং শহরের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, গত বছরের মতো এবারও বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বুলেটিনে জানিয়েছে, সকল প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, মুহরি, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহরি নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ০১ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ০২ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় মুহরী নদী ফেনী জেলায় সতর্কসীমায় (বিপদসীমার কাছাকাছি) প্রবাহিত হতে পারে এবং নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারি থেকে অভিভারি ও পরবর্তী ০২ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগামী ০৩ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে ও পরবর্তী ০২ দিন হ্রাস পেতে। পারে; এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগামী ০৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; এই সময়ে নদীসমূহ বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
সুরমা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে; এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ০৩ দিন উক্ত নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ০৩ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার বিরাজমান আছে; যা আগামী ০১ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ বিরাজমান আছে এবং এই অববাহিকায় আগামী ০১ দিন ভারি থেকে অতি ভারি ও পরবর্তী ০২ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।