
অনলাইন ডেস্কঃ
দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যক পদ হলো প্রাথমিক স্কুলে। ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি স্কুলে পদ আছে ৪ লাখ ২২ হাজারের বেশি। কিন্তু নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা, আদালতে মামলা, প্রশাসনিক জটিলতা, নিয়োগ পরীক্ষায় বিলম্ব এবং পদোন্নতিতে ধীরগতির কারণে শিক্ষকস্বল্পতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক এবং সৃষ্ট হওয়া নতুন পদ মিলে ৭৩ হাজারেরও বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের নেতৃত্বে একটি দল সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ নির্দেশনা দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের পাশাপাশি নতুন নিয়োগেরও নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার এমন নির্দেশনার পর এসব পদে দ্রুততম সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর তোড়জোড় করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) মাসুদ আকতার খান বলেন, সারা দেশে শূন্য পদের শিক্ষকদের তালিকা প্রস্তুত আছে। প্রাথমিকে ৬০ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে। কিন্তু গত বছর উচ্চ আদালত চাকরিতে নতুন কোটা অর্থাৎ মেধার ভিত্তিতে ৯ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার রায় দিয়েছেন। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কী বিধি যুক্ত হবে, তা জনপ্রশাসন ও পিএসসির মতামতের অপেক্ষায় আছি। মতামত পাওয়া মাত্র নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করব।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চালানো বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) তথ্য বলছে, দেশে এখন মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এক কোটির বেশি। এসব স্কুলে সর্বমোট পদ আছে ৪ লাখ ২২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদ আছে ৬৫ হাজার ৪৫৭টি। শূন্য রয়েছে ৩৪ হাজার ১০৬টি। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব স্কুলে সহকারী শিক্ষক থেকে চলতি দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৬৭৫টি পদে। একই ভাবে সহকারী শিক্ষক পদ রয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৪ হাজার ৫৩৬টি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিক স্কুলগুলোয় প্রায় ২০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যা সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হতে পারে। আর সংগীত, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকের জন্য ৫ হাজার ১৬৬টি পদ এবং চারুকলার শিক্ষকের জন্য ৫ হাজারের বেশি পদ সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে। এসব শিক্ষককে অঞ্চলভিত্তিক পদায়ন দেওয়া হতে পারে। যখন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, তখন সব পদের বিজ্ঞপ্তি একসঙ্গে দেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আকতার খান বলেন, আমরা চাচ্ছি সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি একসঙ্গে দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।
সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানিয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান রক্ষা করতে হলে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। তার মতে, পদ শূন্য হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলে ভালো হয়।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কাজ দ্রুত সময়ে করতে পারলেও প্রধান শিক্ষক পদে জটিলতা দূর করতে সময় লাগবে। কারণ প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি ও পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম। আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তম। সর্বোচ্চ আদালত প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে ৪৫ জন শিক্ষকের পক্ষে রায় দিয়েছেন। যে ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক রিট করেছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয় কেবল সেসব প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা দিয়ে অর্থছাড় করেছে। এ নিয়ে সারা দেশের অন্যান্য প্রধান শিক্ষক ক্ষুব্ধ। তারাও এখন মামলা ও আন্দোলনে যাওয়া কথা বলছেন।