
অনলাইন ডেস্কঃ
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি মানুষের আশা ও আস্থা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রত্যাশা। কমিশনে ভুক্তভোগী মানুষের নামে-বেনামে অভিযোগ জানানোর সংখ্যাও বেড়েছে। দুদকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে বেড়েছে অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ ও অনুসন্ধান শেষে মামলার (এফআইআর) সংখ্যা। এ ছাড়াও দুদক দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরোধ, দুর্নীতিবিরোধী গণসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও কাজের ক্ষেত্রে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দুদককে সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানানোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মনে করছে। কমিশনও দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। দুদকের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদকের বিগত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাসিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়; এই সময়ের মধ্যে মোট ৫৩০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিয়েছে; যার মধ্যে জানুয়ারিতে ৯৬, ফেব্রুয়ারিতে ৯৫, মার্চে ১০১, এপ্রিলে ১১৮, মে-তে ৭২ ও জুনে ৮৪টি। এ সময়ে মোট ৫টি অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি হয়েছে। সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করা হয়েছে ১৬১টি। এফআইআর বা মামলা হয়েছে ২৫৫টি। চার্জশিট হয়েছে ১৭৫টি। ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে ৪১ মামলার। দুদক জানুয়ারি থেকে জুন মাসে করা ২৫৫ মামলায় ৯৮৩ জনকে আসামি করেছে। ৫৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এফআরটি দিয়েছে ১০৭টি। মাসিক পরিসংখ্যান বলছে, দুদক গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে মামলা করেছে ৪৫টি করে। আর এই সংখ্যা চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ছিল প্রায় দ্বিগুণ। চলতি বছরের ছয় মাসে গড়ে প্রায় ৮৯টি মামলা করেছে কমিশন। দুদকের তথ্যমতে, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ২৫৫ মামলা হয়েছে। এসব মামলার ৯৮৩ আসামির মধ্যে ২১১ জন সরকারি চাকরিজীবী, বেসরকারি চাকরিজীবী ৩২৯, ব্যবসায়ী ৬৪, রাজনীতিবিদ ৬৮ ও জনপ্রতিনিধি ১৪ জন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন গত ১০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। একই সময়ে কমিশনার হিসেবে যোগ দেন সাবেক জেলা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও অভিজ্ঞ সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ। তাদের দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে দুদক। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্নীতি অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছেন। অনুসন্ধান ও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে গণশুনানি করছেন। গণশুনানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কমিশনের সদস্যরা।
বিশ্লেষক মহল বলছেন, দুদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হলেও বিগত সরকারের সময়ে দুদক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হিসেবে জনআস্থা অর্জন করতে পারেনি। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের পূর্ববর্তী সময়ের বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের ঘটনা জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ওই সময় দুদকের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে। দুদকের পরিচিতি হয়ে উঠেছিল ‘কাগুজে বাঘ’। অনেক ক্ষেত্রে দুদক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা বিরাগভাজনদের হয়রানির জন্য ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমান কমিশন সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়েছেন। দুদকের সামগ্রিক কার্যক্রমকে বিস্তৃত করেছেন।
কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের চেষ্টা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে বোঝানো যে, দুর্নীতি শুধু শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ নয় বরং সামাজিক সাংস্কৃতিক ও সব ধর্মীয় মানদণ্ডে একটি অগ্রহণযোগ্য ঘৃণ্য, ধ্বংসাত্মক ও বর্জনীয় ব্যাধি। এ মানসিকতার বিকাশে সব সম্ভাব্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কৌশলগত এবং টেকসই দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনায় দুদক কাজ করছে।
বর্তমান কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে চাইলে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আমি যদ্দূর জানি, বর্তমান কমিশন ভালো কাজ করছে। তবে তারা ভালো কি মন্দ করছে, সেটা সময় বলে দেবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিটি মামলা আদালতে প্রমাণ করতে হয়। তারা উত্থাপিত মামলাগুলো আদালতে প্রমাণ করতে পারলে অবশ্যই কমিশনের কাজকে ভালো বলতে হবে। আর প্রমাণ করতে না পারলে লোকজন বলবে হয়রানির জন্য মামলা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও দুদক সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ‘দুর্নীতি দমনে দুদকের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমরা দুদক সংস্কার কমিশন থেকে বেশ কিছু সুপারিশ সরকারের দিয়েছি। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আশা করা যায় দুদক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে। বর্তমানে কমিশনে যারা আছেন, তাদের পক্ষে বাস্তবায়নযোগ্য পরামর্শ ও সুপারিশগুলো অনুসরণ করতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, দুদক সংস্কার প্রতিবেদনে দুদক সংস্কারের লক্ষ্যে ৪৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ রয়েছে।
সূত্রঃ কালবেলা