
অনলাইন ডেস্কঃ
দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের নাম খেলাপি ঋণ। কোনোভাবেই এর লাগাম টানা যাচ্ছে না। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের কাছেই খেলাপি ১ লাখ ৮ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। তাদের কাছে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকায় রয়েছেন এমন কিছু ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যারা বছরের পর বছর ঋণ নিচ্ছেন, কিন্তু পরিশোধ করছেন না। এসব প্রতিষ্ঠান শুধু ঋণখেলাপিই নয়, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় আইনেরও বাইরে থেকে গেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর নগদ সংকট বাড়ছে, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং চাপে পড়ছেন সাধারণ আমানতকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শীর্ষ দশে থাকা গ্রুপগুলোর ৫৮টি প্রতিষ্ঠান এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই ৫৮ প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকা পড়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণ ৭২ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, তালিকায় শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলম। গ্রুপটির ১০টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ খেলাপির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেড, এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সোনালী ট্রেডার্স, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেড, এ জে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ২৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক প্রভাবশালী ও বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ বেক্সিমকো। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের এই গ্রুপের ২৪টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ খেলাপির তালিকায় জায়গা পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ
এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড, বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট-১ লিমিটেড, বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেড, বেক্সিমকো ফ্যাশনস লিমিটেড, এসেস ফ্যাশন লিমিটেড, ইয়েলো অ্যাপারেলস, শাইনপুকুর গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস, অটাম লুপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস, কোজি অ্যাপারেলস, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়ার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্ল্যাটিনাম গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশনস, উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস, বে সিটি অ্যাপারেলস, হোয়াইট বে অ্যাপারেলস। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ২৬ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। এসব ঋণের ২৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকাই এখন খেলাপি।
শীর্ষ খেলাপি গ্রুপের তালিকায় আছে দেশের পুরোনো একটি আবাসন কোম্পানি। এই গ্রুপটির চারটি কোম্পানি দেশের অন্তত ৯টি ব্যাংক থেকে ১১ হাজার ১৬২ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। যে ঋণের ৬ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকাই এখন খেলাপি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৫টি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—ক্রিসেন্ট ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্ট, রূপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার, লেক্সাকো লিমিটেড এবং রিমিক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা, যার পুরোটাই এখন খেলাপি।
অ্যাননটেক্স গ্রুপেরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠান শীর্ষ খেলাপির তালিকায় স্থান পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—সুপ্রভ কম্পোজিট নিট, সুপ্রভ স্পিনিং, সুপ্রভ রোটর স্পিনিং, সিমরান কম্পোজিট এবং জ্যাকার্ড নিট টেক্স লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তালিকায় রয়েছে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী, আবাসন কোম্পানি, টেক্সটাইল ও স্টিল শিল্পের অনেক পুরোনো নাম। অনেক প্রতিষ্ঠান আগে একাধিকবার ঋণ পুনঃতপশিল করে ঋণগ্রহীতার মর্যাদা বজায় রাখলেও শেষ পর্যন্ত খেলাপির তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা ফাইনাল তালিকা নয়। এখানে ৫৫০ কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপিদের নাম এসেছে। শুধু তাই নয়, যারা এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, তাদের আরও ঋণ রয়েছে। যেগুলো এখনো খেলাপি হয়নি, সেগুলোও আস্তে আস্তে যুক্ত হচ্ছে। এই শীর্ষ খেলাপিদের কেউ কেউ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন। অথচ এখনো তারা রাজকীয় জীবনযাপন করছেন, বড় বড় ব্যবসায়িক উদ্যোগ নিচ্ছেন, এমনকি বিদেশ ভ্রমণও করছেন নিয়মিত। শুধু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছেন না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তালিকায় দেখা গেছে, আগের পরিচিত কিছু বড় ঋণখেলাপির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও এবার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করলেও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চাপে বা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে তারা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, কিছু নতুন নাম উঠে এসেছে যাদের ব্যবসায়িক ভিত্তি দুর্বল, কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা বিশেষ সুবিধা নিয়ে তারা বিশাল অঙ্কের ঋণ সংগ্রহ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকায় কেয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কেয়া কসমেটিক্স লিমিটেডও জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ২ হাজার ১৩৯ কোটি টাকাই এখন খেলাপি। তালিকায় আছে এফএমসি গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—এফএমসি ডকইয়ার্ড ও ব্রডওয়ে রিয়েল স্টেট লিমিটেড। এই দুই প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা ঋণের পুরোটাই খেলাপি। তালিকায় আছে রতনপুর গ্রুপেরও দুটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে রানকা ডেনিম টেক্সটাইল মিলস ও রানকা সোহেল কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস। এই দুটি প্রতিষ্ঠানেরও ১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকার পুরোটাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। তালিকায় থাকা হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনালের ১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা এখন খেলাপি। এ ছাড়া তালিকায় দশম অবস্থানে থাকা সাদমুসা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এসব ঋণের ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা এখন খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, শীর্ষ খেলাপির তালিকায় জায়গা পাওয়া ডেলটা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান; দ্য ডেলটা কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ এবং দ্য ডেল্টা স্পিনিং মিলসের ১ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকাই খেলাপি। আব্দুল মোনেম লিমিটেডের ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকার মধ্যে ৬৯৮ কোটি, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৬৭১ কোটি, মাইশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ৬৯৫ কোটি টাকার মধ্যে ৬৬৩ কোটি এবং আরামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আরামিট সিমেন্টের ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার মধ্যে ৮৮৪ কোটি টাকা খেলাপি। এ ছাড়া অ্যাপোলো গ্রুপের অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ১ হাজার ২৩ কোটি, নোমান গ্রুপের বি আর স্পিনিং মিলসের ৭৯০ কোটি, আশিয়ান গ্রুপের আশিয়ান এডুকেশন লিমিটেডের ৬৪৬ কোটি, অটবি গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমসের ৬১৭ কোটি পুরোটাই এখন খেলাপি।
শীর্ষ খেলাপির তালিকায় আরও যারা: একটি প্রভাবশালী হাউজিং এস্টেট লিমিটেডের মোট ৪ হাজার ১১১ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা খেলাপি। ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মোট ঋণ ২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, এর মধ্যে ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা খেলাপি। পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা কেরানীগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি। মেহরিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার পুরো ঋণই খেলাপি। গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের ১ হাজার ১৮০ কোটি, সাইফ পোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের ১ হাজার ১৭৬ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল নিটিং অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১ হাজার ১৪৩ কোটি, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ১ হাজার ২৩ কোটি এবং মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ৯৪৮ কোটি টাকার সম্পূর্ণ ঋণই খেলাপি।
তালিকায় আরও রয়েছে জাকিয়া কটনটেক্স লিমিটেড, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়ার লিমিটেড—যাদের যথাক্রমে ৯৪৫, ৯৪০ ও ৮৭৬ কোটি টাকার পুরো ঋণই খেলাপি। ইসক্রোপ অ্যাপারেলস লিমিটেডের ১ হাজার ১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৯২১ কোটি টাকা খেলাপি। ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের পুরো ৯০৪ কোটি টাকা এবং একটি বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬১ কোটি টাকা খেলাপি।
একটি অয়েল অ্যান্ড শিপিং লিমিটেডের ২ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ৮৮২ কোটি টাকা খেলাপি। তাসনিম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডের ১ হাজার ১১০ কোটি টাকার মধ্যে ৭৫৩ কোটি এবং এস এম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ৮৭৬ কোটির মধ্যে সমপরিমাণ ঋণ খেলাপি। এস এম জুট ট্রেডিংয়ের ৭৪৯ কোটি এবং জুট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ৭২৫ কোটি টাকার পুরো ঋণই খেলাপি। ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিনস লিমিটেডের ৭১২ কোটি টাকা এবং কম্পিউটার সোর্স লিমিটেডের ৭১০ কোটি টাকার মধ্যে ৫৮৭ কোটি টাকা খেলাপি। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের মোট ঋণ ১ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৯৯ কোটি খেলাপি। এ ছাড়া সানস্টার বিজনেস, ফারইস্ট বিজনেস ও কসমস কমোডিটিজ লিমিটেডের ঋণ যথাক্রমে ৬৭৫, ৬৭৪ ও ৬৭২ কোটি টাকা—সবগুলোই খেলাপি।
গ্র্যান্ড ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ ও বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ঋণ যথাক্রমে ৬৬৯ ও ৬৬২ কোটি টাকা খেলাপি। সিদ্দিক ট্রেডার্সের ৬৪৬ কোটি টাকার সম্পূর্ণ ঋণই খেলাপি। পাওয়ারপ্যাক মুতিয়ারা জামালপুর পাওয়ার প্লান্ট লিমিটেডের ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকার মধ্যে ৬২৯ কোটি টাকা খেলাপি। ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ৬২৮ কোটি ও মাদারীপুর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ৬১৮ কোটি টাকার ঋণ সম্পূর্ণরূপে খেলাপি। এহসান স্ট্রিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ৬০৬ কোটি টাকার ঋণও খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত। আর্দেন্ট সিস্টেমসের মোট ৫৮৩ কোটি টাকার ঋণও পুরোপুরি খেলাপি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালীরা তাদের প্রভাব খাটিয়ে অনেক ঋণ নিয়েছে। কিন্তু সরকার পতনের পর তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এতে তাদের ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এখন ব্যাংকগুলো তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছে। তাদের সম্পদ বিক্রি করে এসব ঋণ সমন্বয় করা হবে। এ ছাড়া কীভাবে এসব ঋণ আদায় করা যায় সে বিষয়ে পর্যালোচনা চলছে।
গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকগুলো তাদের মূলধনের ঘাটতিতে পড়ছে, আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে, এবং নতুন উদ্যোক্তারা যথাযথভাবে অর্থায়ন পাচ্ছেন না। সম্পদের জবাবদিহি, ঋণ অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, এবং আদালতের মাধ্যমে দ্রুততর ঋণ আদায়—এই তিনটি বিষয়ের ওপর এখনই গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি মারাত্মক সংকটে পড়বে, যার প্রভাব সাধারণ জনগণের ওপরও পড়বে।’
সূত্রঃ কালবেলা