
অনলাইন ডেস্কঃ
জুলাই আন্দোলনের অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়াই চূড়ান্ত করা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রত্যাখ্যান করবে গণঅধিকার পরিষদ। রোববার (০৩ আগস্ট) গণঅধিকার পরিষদের দলীয় কার্যালয় পুরানা পল্টনের আল রাজী কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানো হয়।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটাপ্রথা বিলুপ্ত হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে আবারও ৩০ শতাংশ কোটা ফিরিয়ে আনার পটভূমিকায় ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে শাসকগোষ্ঠী গুলি করে মানুষ হত্যা শুরু করলে কোটা সংস্কার আন্দোলন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে রূপ লাভ করে। এই আন্দোলনে বিপুল ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব সফল গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়।
এই গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের আন্দোলনে সৃষ্টি হয়নি। দীর্ঘ ১৪-১৫ বছরের ধারাবাহিক লড়াইয়ের শেষ পরিণতি লাভ করে জুলাই মাসে এসে। যারা গণঅভ্যুত্থানকে শুধু ৩৬ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য মূলত অতীতের সব সংগ্রামকে অস্বীকার করা। তাই, বিশেষ করে ২০১৩ সালে শাপলাচত্বরে গণহত্যা এই দেশের আলেম সমাজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাগ্রত করে তোলে।
এদিকে ২০১৫ সালের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তোলে।
এরপর ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের আপোষহীন নবজাগরণ হাসিনার মসনদে আঘাত করে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, আর কোন কোটাই থাকবে না! তখন এই দেশের মানুষের মধ্যে সাহসের বীজ বপন হয় যে, হাসিনার মাথা নত করা যায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সাহস পায় স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা লক্ষ করছি, ইতোমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্রের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বিপ্লবের অংশীজনদের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি সরকার। বিপ্লবের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও স্বীকৃতি ছাড়া ঘোষণাপত্রকে প্রত্যাখ্যান করবে গণঅধিকার পরিষদ। জুলাই কারও একার নয়, জুলাই আমাদের সবার। কোনো একটা দলকে খুশি করতে ঘোষণাপত্র রচিত হলে; তা হবে ৭১-এর ইতিহাসের মত ২৪-এর ইতিহাসকে একপাক্ষিক ও কুক্ষিগত করা, যা হবে জুলাই চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উচ্চতর পরিষদ সদস্য শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিলু খান, সহ দপ্তর সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ সাগর, ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুজ্জামান সম্রাট প্রমুখ।