
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামরাই মব জাস্টিসের প্রবর্তক বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ট্যাগ বা তকমা দিয়ে বামদের এই আচরণ আজকের নয়। অনেক দিন ধরে চলে আসছে। তারা আজও শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র টিকিয়ে রাখতে বর্ণচোরার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ শাসনামলে জামায়াত ও বিএনপির ৬ নেতার ছবি প্রদর্শন করা হয়। এতে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাসেম আলী, এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি স্থান পায়।
এতে ক্ষুদ্ধ হয় বামপন্থি সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। এক পর্যায়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-(বিসিএল), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন বামপন্থি সংগঠনের ২০-২৫জন নেতাকর্মী টিএসসির সামনে হৈ হল্লোড় ও বিভিন্ন স্লোগান দেয়। শিবিরের ওই চিত্রপ্রদর্শনীতে ঢুকে পড়ে বেশ কয়েকজন বাম নেতাকর্মী।
পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার আশংকায় ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত ও বিএনপির ওই ৬ নেতার ছবি সরিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম।
এক পর্যায়ে ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনের (টিএসসি) পায়রা চত্বর ও সবুজ চত্বরে শিবির ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই উত্তপ্ত স্লোগান বিনিময় হয়।
রাত সাড়ে ৯টায় টিএসসিতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাবি শিবির।
ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, মতিউর রহমান নিজামীসহ অন্যদের ফাঁসির আদেশ রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড। এর দায় শুধু হাসিনার নয়, শাহবাগের ফ্যাসিবাদীদেরও; যারা ১০-১২টা সংগঠন থেকে ২০-২৫ জন নিয়ে টিএসসিতে এসেছে।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ গৌরবজনক অধ্যায়। বাকশাল কায়েম করে মুক্তিযুদ্ধকেপ্রথমবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে শাহবাগের পুর্বসূরীরা। ২য় দফায় ১৩ সালে শাহবাগ কায়েম করে আওয়ামীলীগকে ফ্যাসিবাদ বানায় এই শাহবাগ। শাহবাগ ও বাকশালের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।
ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, হাসিনা গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে গত বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম সহ যত অপরাধ করেছে, তার প্রতিটিকেই আমরা উপস্থাপন করেছি। যেমন- শাপলা হত্যাকান্ড, সেনা অফিসার হত্যাকান্ড ইত্যাদি। একইসাথে শাহবাগের মবতান্ত্রিক ট্রাইব্যুনাল নাটকের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। ফ্রেমের ছবিগুলোতে যেসব ব্যক্তিবর্গের ছবি ছিল, তারা বিচারিক হত্যাকান্ডের শিকার। এ বিষয়টি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও অন্যান্য জাতীয় নেতারা বিভিন্ন সময় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, কথিত বিচারে সাইদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসা হিন্দু ব্যক্তিকেও গুম ও ভারতে পাচার করা হয়। মীর কাশেম আলীর মামলায় তার সন্তান ব্যারিস্টার আরমান আইনজীবী হিসেবে ভুমিকা রাখছিলেন। হাসিনার ফ্যাসিবাদী বাহিনী তাকেও গুম করে। চট্টলার সিংহ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকেও ওরা গুম করে।
ফরহাদ আরও বলেন, সারা দুনিয়ার মানবাধিকার সংস্থা, পর্যবেক্ষক এবং যুদ্ধাপরাধ বিচারের এক্সপার্টরা সর্বসম্মত মত দিয়েছেন— এই বিচার সুষ্ঠু নয়, বরঞ্চ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। বিশেষ করে, স্কাইপি কেলেঙ্কারির ঘটনা জাতির সামনে উন্মোচন করেছে— রায়গুলো ছিল ফরমায়েশি। এমনকি বিচারকরাও জানতেন, তাদের অপরাধ প্রমাণযোগ্য নয়।
ঢাবি শিবির সভাপতি বলেন, সম্প্রতি Alliance for Witness Transparency— AWT নামক একটি বেসরকারি সংস্থা ট্রাইব্যুনাল নাটকের সাক্ষীদের স্বতঃস্ফূর্ত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। সেখানে সাক্ষীরা জানাচ্ছেন, তাদের জীবন নাশ ও পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ানো হয়েছে। ফলে, বিচারের ইতিহাসে এমন নিকৃষ্টতম বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে ক্রিটিকাল থাকা, একে প্রশ্ন করার অধিকার সবারই থাকতে হবে। যেহেতু, বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই গুম, কেলেঙ্কারি, মিথ্যা সাক্ষ্য, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও সুষ্ঠু বিচারের তোয়াক্কা না করেই ফ্যাসিবাদী কায়দায় রায় প্রদান ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে; সেহেতু এই বিচারিক হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের ন্যায্য রাজনৈতিক অবস্থান জারি থাকবে।
এস এম ফরহাদ বলেন, শেখ হাসিনার বিচারিক হত্যাকাণ্ডের বৈধতা উৎপাদনকারীরা একাত্তরের পরে বাকশাল, ২০০৮ এর পরে ফ্যাসিবাদ, শাপলা গণহত্যা, সাঈদীর রায় পরবর্তী গণহত্যা এবং জুলাই গণহত্যাসহ সকল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের এনাবলার ও বৈধতা উৎপাদনকারী হিসেবে আজীবন চিহ্নিত থাকবে।