
অনলাইন ডেস্কঃ
দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত বৃটেনের সাবেক ট্রেজারি মন্ত্রী ও হ্যাম্পস্টেড-হাইগেট আসনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি মামলায় তিনি ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলির পাঠা’। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। গার্ডিয়ানের চিফ রিপোর্টার ড্যানিয়েল বফিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি রোববার (১০ আগস্ট) প্রকাশ করে গণমাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে টিউলিপ মায়ের, ভাইয়ের ও বোনের জন্য ঢাকার পূর্বাচলে একটি জমি নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেন। তার ও আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১১ আগস্ট। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা ভিডিও কনফারেন্সে হাজির হবেন কি না- এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তিনি ব্রিটিশ আইনজীবী হুগো কিথ কেসির পরামর্শ নিচ্ছেন। এখনো তিনি কোনো আনুষ্ঠানিক সমন পাননি। আমি যেন এক ধরনের ‘কাফকায়েস্ক দুঃস্বপ্নে’ আটকে আছি, যেখানে আমাকে বিদেশে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে অথচ আমি এখনো জানি না অভিযোগগুলো আসলে কী।
টিউলিপের দাবি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ দিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকেই, বাংলাদেশের ‘কদর্য রাজনীতি’ তার জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। অচেনা কিছু ওয়েবসাইটে খবর ছাপা হতে থাকে যে, তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন।
এ নিয়ে ২০১৩ সালের এক ছবি সামনে আসে, যেখানে মস্কোতে শেখ হাসিনা ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সিদ্দিককে দেখা যায়। সিদ্দিক ব্যাখ্যা দেন, তিনি ও তার বোন কেবল বেড়াতে গিয়েছিলেন ও শেষ দিনে একটি আনুষ্ঠানিক চায়ের দাওয়াতে দুই মিনিটের জন্য পুতিনের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল।
টিউলিপের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো- ২০০৪ সালে লন্ডনের কিংস ক্রস নামক এলাকায় তাকে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার দলের ঘনিষ্ঠ লোকজনের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর যোগাযোগ ছিল।
এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের দাবি, ওই ব্যক্তি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় নন ও তাকে ভোটও দেননি। আগের এক সাক্ষাৎকারে ভুলবশত তিনি বলেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা কিনেছেন, যা নাকি বৃদ্ধ মা-বাবা ‘দুর্বল স্মৃতির’ কারণে হয়েছিল। অর্থাৎ তার মা-বাবা হয়তো কখনো ভুলবশত বলেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তারা কিনেছিলেন।
এছাড়া প্রশ্ন ওঠে- কেন তিনি ক্রিকলউডে নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডেভেলপারের বাড়িতে থাকছিলেন। সিদ্দিক জানান, নিরাপত্তা হুমকির কারণে তাকে হঠাৎ বাড়ি বদলাতে হয়েছিল ও পরিচিত একজনের কাছ থেকে তিনি ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগের পর তিনি নিজেই মন্ত্রীদের নৈতিক মানদণ্ডবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করেন। দুই সপ্তাহের গভীর তদন্ত শেষে ম্যাগনাস তাকে কোড লঙ্ঘনের অভিযোগ থেকে মুক্ত করেন। তবে ম্যাগনাস বলেন, পারিবারিক সম্পর্কের কারণে সৃষ্ট সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সচেতন না থাকা দুর্ভাগ্যজনক। টিউলিপ এ বিষয়ে বলেন- আমি জন্মসূত্রে কার ভাগনি, সেটা তো আমার হাতে নেই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানে টিউলিপ সিদ্দিকের নানা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান প্রায় পুরো পরিবারসহ নিহত হন। সেই ট্র্যাজেডি মাথায় রেখেই এই নারী রাজনীতিক বলেন, আমি আমার খালার পক্ষে সাফাই গাইতে আসিনি। বাংলাদেশের জনগণ যেন প্রয়োজনীয় ন্যায়বিচার পায়, সেটাই চাই।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সিদ্দিক অর্থনৈতিক সচিব ও সিটি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি আর্থিক খাত পর্যালোচনায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছিলেন। তবে এসময় পাঁচ হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত বদলাচ্ছিল। ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। হাজারো মানুষের মৃত্যুর পর তিনি ও তার বোন শেখ রেহানা ভারত পালিয়ে যান।