
অনলাইন ডেস্কঃ
খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানকে দুই দফায় বদলি করা হয়েছিল। তবে সেই বদলিকে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান। বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করে দুবারই খুলনা জেলা পরিষদে থেকে দাপটের সঙ্গে সবকিছুই চালান। কর্মস্থলে দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করলেও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ছিলেন অসহায়। তবে অবশেষে এবার তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করার পর বদলির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলা পরিষদ শাখা খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুর রহমানকে বদলির আদেশ জারি করেছে। অফিস আদেশে, এস এম মাহবুবুর রহমানকে খুলনা জেলা পরিষদ থেকে নেত্রকোনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি ১৩ আগস্টের মধ্যে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। অন্যথায় ১৪ আগস্ট থেকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি বলে গণ্য হবেন।
এ আদেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীনের স্বাক্ষরে গত মঙ্গলবার জারি করা হয়। বুধবারই তাকে খুলনা জেলা পরিষদ থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ বুধবার তার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এর আগে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবুর রহমানকে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা পরিষদে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি বগুড়া জেলা পরিষদে যোগ না দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে খুলনায় চাকরি করেন । এরপর তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদে আবারও বদলি করে। কিন্তু সেখানে যোগ না দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ দেখিয়ে খুলনা জেলা পরিষদে বহাল তবিয়তে রয়ে যান।
জেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে ছত্রছায়ায় এস এম মাহবুবুর রহমান হয়ে ওঠেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। সেইসঙ্গে পরিচিত ছিলেন জেলা পরিষদের অঘোষিত চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা। পরিষদে তার কথাই শেষ কথা। তার দাপটে অফিসের কর্মচারীরা সব সময়ই থাকেন তটস্থ ও বদলি আতঙ্কে।
একাধিক অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা লোপাটই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তার বিরুদ্ধে জেলা পরিষদের মালিকাধীন জায়গা খুলনা সদরের ডাকবাংলো, ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারের যতিন-কাশেম সড়ক ও ডাকবাংলো, আঠারমাইল, দাকোপ ও রূপসায় মার্কেট নির্মাণ করে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। অথচ জেলা পরিষদে জমা হয়েছে নামমাত্র অর্থ।
এছাড়া খেয়াঘাট ইজারায় অনিয়ম করে অন্তত কোটি টাকা লুফে নিয়েছেন। ভুতুড়ে প্রকল্প, গভীর নলকূপ ও প্রকল্প বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার পর তার স্বার্থ হাসিল হলেই বাস্তবায়নাধীন অবস্থায় ফেলে রাখেন।
এছাড়া জেলা পরিষদের পেছনে কর্মচারীদের বহুতল আবাসিক ভবন চার থেকে পাঁচ বছর নিজে একাই দখল করে বসবাস ও পাখি পালন করেন। মোটরসাইকেলের নামে তেল তুলে সেই টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির খরচ চালিয়েছেন। মোটকথা পরিষদে গড়ে তোলেন অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য।
তবে এসব অপকর্ম ঠেকাতে ঢাল হিসাবে অবৈধভাবে বের করেন একটি দৈনিক পত্রিকা। যার সম্পাদক ছিলেন তিনি নিজেই। কোনো সাংবাদিক তার অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করতেন তিনি। ওই পত্রিকা প্রকাশনার খরচ দেখিয়ে তিনি জেলা পরিষদ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও পরবর্তীতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবারো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। তার বিরুদ্ধে, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে বহু লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগীরা। ভুয়া প্রকল্প তৈরি করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সহকর্মীরা কথা না শুনলে মিথ্যা মামলা দিয়ে করেছেন হয়রানি।
তবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবুর রহমান এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেছেন। এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, মন্ত্রণালয়ের বদলির আদেশ পাওয়ার পর বুধবার তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক খুলনাঞ্চল