
অনলাইন ডেস্কঃ
শেখ আসলাম হোসেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে হিসাব রক্ষক পদে চাকুরি করতেন। সরকারি বিধি অনুযায়ী চাকুরী থেকে অবসরে যাওয়ার একবছর আগে পিআরএল (Post Retirement Leave)-এ অর্থাৎ অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে গেছেন গত ১০ আগস্ট। সরকারি প্রচলিত বিধানে এক বছর ছুটি ভোগের পর তাকে পূর্ণ অবসর গ্রহণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু তিনি পিআরএল ভোগ না করে যথানিয়মে নিয়মিত অফিস করছেন। কেন কিভাবে অফিস করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন কিছু পেইন্ডিং কাজ রয়েছে সেগুলো শেষ করার জন্য অফিস করছেন। এখানে মোটাদাগে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পিআরএল-এ থাকা শেখ আসলাম হোসেন কিভাবে অফিসিয়াল কাজ করছেন? কেসিসি খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, অতীতে অনেক কর্মকর্তাই পিআরএল এ থাকা অবস্থায় উচ্চ পদস্থ কর্তাকে ম্যানেজ করে পিআরএল এর পুরো সময়টা অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন। আর এই এক বছরে কেসিসি ভাগ্য পরিবর্তণের চেয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন খুব সহজে। উদাহরণ হিসেবে কেসিসির বর্তমান প্রধান কর নির্ধারক কর্মকর্তা শেখ হাফিজুর রহমানের কথা বলেছেন অনেকে। তারা বলেন, ৯ মাস আগে পিআরএল-এর ছুটিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি একবছর বাড়িয়ে প্রধান কর নির্ধারক কর্মকর্তার মত গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। আগামী নভেম্বরে পুরোপুরি অবসরে যাবেন বলে জানা গেছে। কেসিসির একাধিক সুত্র জানিয়েছেন, শেখ হাফিজুর রহমান পিআরএল-এ থাকা অবস্থায় কর্পোরেশনের সেবাদানের নামে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ইতিমধ্যে সক্ষম হয়েছেন।
শুধু আসলাম হোসেন বা হাফিজুর রহমানই না; নির্বাহী প্রকৌশলী যান্ত্রিক পদে থাকা অবস্থায় পিআরএল-এ একবছর আগে গেলেও পিআরএল ভোগ না করে বহাল তবিয়তে এক বছর কাজ করেছেন মো. আব্দুল আজিজ। এখানেও তিনি নিজের ভাগ্যেও পরিবর্তন করেছেন খুব সহজে। পিআরএল এর পুরো সময়টা দায়িত্বপালন শেষে আবারো চুক্তিভিত্তিক কাজ করার জন্য কেসিসি বিদায়ী একজন কর্মকর্তাকে ২০লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলে কেসিসিতে চাউর আছে। পরবর্তীতে টাকা-চাকুরি কোনটাই পায়নি আব্দুল আজিজ। কেসিসির সুত্র দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা অনুসন্ধান করলে সবকিছুর সত্যতা মিলবে।
অপর এক সুত্র দাবি করেছে, মো. আব্দুল আজিজ (নির্বাহী প্রকৌশলী যান্ত্রিক) এর পিআরএল কাটানোর সময় দায়িত্ব প্রদানের জন্য কেসিসির শীর্ষ কর্তাদের শোকজ করে ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পিআরএল-এ যাওয়া অপর এক কর্মচারী শঙ্কর কুমার দেবনাথ পিআরএল ভোগ না করে দায়িত্বপালন করাকালিন পিএফ ফপান্ডের ৩৪লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। যা নিয়ে কেসিসিতে তোলপাড়ের ঘটনা ঘটেছিলো সে সময়। সুত্র দাবী করেছে শুধু পিএফ ফান্ডের টাকাই নয় শঙ্কর দেবনাথের বিরুদ্ধে আরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একই পথে হাটছেন কার্য্য সহকারী আব্দুর রহমান। ইতিমধ্যে আব্দুর রহমান টাকা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দেন দরবার করছেন একবছর দায়িত্ব পালনের জন্য।
কেসিসির নির্ভরযোগ্য সুত্র দাবি করেছেন, পিআরএল ভোগ না করে যারা দায়িত্বপালন করে তাদের অধিকাংশই দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত। শেখ হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ আসলাম হোসেন হিসাব রক্ষকের মতো গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় চাকুরি করার সুবাদে অল্প সময়ের ব্যবধানে এম এ বারী সড়কে ৬তলা বাড়ির মালিক হয়েছেন। যেকোন ফাইল ছাড়াতে তিনি নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন। এ ব্যাপারে শেখ আসলাম হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি তার দপ্তরে গিয়ে কথা বলতে বলেন। পিআরএল যাওয়ার মত বেশ কয়েকজন আগেভাগে দায়িত্বে থাকতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন বলে তথ্য আছে।
পিআরএল-এ থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্বপালনে সুযোগ দেয়ায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, অবৈধ টাকার কাছে বরাবরই তারা পরাস্ত হচ্ছেন। পিআরএল-এ যাওয়ার কথা থাকলেও টাকা দিয়ে পিআরএল ভোগ করেন না অনেকে। ফলে যাদের পদোন্নতি হওয়ার কথা তারা নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পাচ্ছেন না। এ বিষয় নিয়ে মন্ত্রনালয়ের শোকজ পেয়েছিলেন ওই সময়ের প্রধান নির্বাহী। আর বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী অবসর গ্রহণের পর এক বছর ছুটি ভোগ করার নিয়ম রয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক খুলনাঞ্চল