
অনলাইন ডেস্কঃ
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এই তালিকায় দেখা গেছে, এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদে ৪৬২টি জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তাঁদের মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৮, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৮ জন প্রার্থী হয়েছেন।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ডাকসুতে প্রার্থী হিসেবে যাঁদের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৬০ জন ছাত্রী ও ৪০২ জন ছাত্র। এ ছাড়া প্রধান তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যে চারজন ছাত্রী। এ ছাড়া হল সংসদের ১৩টি পদে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ১০৮ জন। ফজলুল হক মুসলিম হলের একজনের স্বাক্ষর ও ফোন নম্বর না থাকায় তাঁর প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের কেউই ২৫ আগস্ট পর্যন্ত হল কিংবা ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে ২৬ আগস্ট থেকে প্রার্থীরা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
ডাকসু নির্বাচনের চারটি প্যানেলের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করা হয় গত বুধবার। সেগুলো হলো, ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল, বাম তিন সংগঠনের ‘অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪’ প্যানেল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া গতকাল উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এর বাইরে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট, ডাকসু ফর চেঞ্জ, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, ডিইউ ফার্স্ট, প্রতিরোধ পর্ষদ, সম্মিলিত ছাত্র ঐক্য (স্বতন্ত্র) পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল আলাদা করে সংবাদ সম্মেলন করেছে তিন প্যানেল। সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বরের পাশাপাশি হালনাগাদ ছবি যুক্ত করার দাবি জানান ছাত্র অধিকার পরিষদের ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যানটিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরেন তিনি।
বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমরা দেখছি ডাকসুতে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং প্রতি ১৯ জনে একজন করে প্রার্থী। কেন্দ্রে ২৮টি পদের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীও রয়েছেন। তাই ভোটারদের পক্ষে সবার নাম মনে রাখা সম্ভব নয়। তাই প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বরের পাশাপাশি হালনাগাদ ছবি প্রকাশ করতে হবে। যদি কোনো নারী প্রার্থী ছবি প্রকাশ করতে না চান, তাহলে তাঁরা যেভাবে চান, সেভাবে প্রকাশ করতে হবে।
এদিকে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ব্যানারে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমাকে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি আল-সাদী ভূঁইয়া ও সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জাহিদ আহমেদকে মনোনীত করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুম কালচার (সংস্কৃতি) চিরতরে দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দলটির ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। গতকাল মধুর ক্যানটিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণ আবাসিক রূপান্তর করতে কাজ করব এবং সেদিকে ফোকাস করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পরিপূর্ণ ইশতেহার আমরা শিগগির প্রকাশ করব।’ এ সময় ছাত্রদলের মনোনীত ডাকসুর জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বসবাস করতে পারে, তা নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।’
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ৯টি প্যানেল। কয়েকটি প্যানেলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রার্থী বেশি হওয়ায় নির্বাচন জমে উঠবে। তবে লড়াই হবে ব্যক্তির মধ্যে। ৯ প্যানেলের প্রার্থীকে মুখ্য ভূমিকায় না রেখে এবার ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেবেন বলে জানিয়েছেন অনেকে।
ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘কোনো প্যানেলকে নয়, আমরা ভোট দিতে চাই একজন যোগ্য প্রার্থীকে, যিনি শিক্ষার্থীদের পালস বুঝতে পারে ও অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন বলেন, ‘বিগত ছাত্রলীগের সময়ে যাঁরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অবশ্যই তাঁদের প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রাখব। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমি প্যানেলের তুলনায় সবার আগে ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিতে চাই, যিনি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবেন।’