
অনলাইন ডেস্কঃ
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথম ধাপে এমপিওভুক্ত হচ্ছে দেড় হাজারের বেশি মাদ্রাসা। এরপর বাকি মাদ্রাসাগুলো ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদ্রাসা অনুবিভাগ) এস এম মাসুদুল হক বলেন, গত বুধবার দেড় হাজারের বেশি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা। এখন নিয়ম অনুযায়ী এ প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির কাজ শুরু হবে।
কবে নাগাদ এমপিওভুক্ত করার কার্যক্রম শেষ হবে জানতে চাইলে মাসুদুল হক বলেন, ‘আশা করছি, সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী মে মাস থেকে এসব মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির সরকারি অর্থ পাবেন। আর বাকি মাদ্রাসাগুলো ধাপে ধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে।’
সারা দেশে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে প্রায় ১৬ হাজার। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ১ লাখ। আর শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ লাখের মতো।
এমপিও হলো মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা সরকার থেকে পান।
সূত্র বলছে, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব বুধবার অনুমোদন করেন বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (ইআইআইএন) ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণের ঘোষণাসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছিলেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় তাঁদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় লাঠিপেটাও করে পুলিশ। এরপর ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র বলছে, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তিতে নতুন নীতিমালা ও জনবলকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাদ্রাসাগুলোতে ছয়টি শিক্ষক পদসহ মোট সাতটি পদ থাকবে। নীতিমালায় ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান পদের বেতন নির্ধারণ করা হবে ১১তম গ্রেডে (১২,৫০০-৩২,২৪০ টাকা)। কারি শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক পর্যায়ের পাঁচটি পদ থাকবে, যেগুলোর বেতন হবে ১৩তম গ্রেডে (১১,০০০-২৬,৫৯০)। আর মাদ্রাসাগুলোর প্রতিটিতে অফিস সহায়ক বা এমএলএসএস পদ সৃষ্টি করা হবে। এ ছাড়া মাদ্রাসাগুলোতে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায় চালুর পরিকল্পনা করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, যেটিকে নুরানি পর্যায় বলা হবে।
বর্তমানে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধানেরা মাসিক ৩ হাজার ৫০০ ও সহকারী শিক্ষকেরা ৩ হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর জনবলকাঠামো ও বেতন-ভাতার নীতিমালা করেছিল কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। যদিও সে নীতিমালা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকেরা পাননি।
এ বিষয়ে যুগ্ম সচিব এস এম মাসুদুল হক বলেন, ‘২০১৮ সালের নীতিমালা নয়, আমরা মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তিতে নতুন নীতিমালা ও জনবলকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করেছি। আর মাদ্রাসাগুলোর প্রাক্-প্রাথমিক বা নুরানি পর্যায় চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্তির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে এমপিওভুক্ত করার পর এসব মাদ্রাসা জাতীয়করণের উদ্যোগ নিতে হবে।’