
অনলাইন ডেস্কঃ
আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে ভারতের মণিপুর রাজ্য। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মণিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় এক অতর্কিত হামলায় আসাম রাইফেলসের (এআর) দুই সদস্য নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ সদস্য। এই হামলার জন্য ইম্ফল উপত্যকাভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে। খবর এনডিটিভি ও দ্য ওয়্যার
নিহত ২ সেনানদস্য হলেন- মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার নায়েব সুবেদার শ্যাম গুরুং এবং ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার রাইফেলম্যান রঞ্জিত সিং কাশ্যপ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসরে ১৪ তারিখে আসামের দরংয়ে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। এর ছয় দিন পর এই হামলার ঘটনা ঘটল। ২০২৩ সালের মে মাসে কুকি-জো এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘাত শুরুর পর মণিপুরে মোতায়েন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এটি প্রথম হামলা।
নম্বল পুলিশ স্টেশনের আওতাধীন নম্বল সাবল লেইকাই এলাকায় শুক্রবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। ইম্ফলের দিক থেকে বিষ্ণুপুরের দিকে যাচ্ছিল আসাম রাইফেলসের একটি টাটা ৪০৭ গাড়ি। এ সময় হঠাৎ অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। গাড়িটি লক্ষ্য করে তারা গুলি ছোড়ে।
প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন সেনাসদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং আহত অন্যদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরও একজন সেনার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। আহত হন আরও পাঁচ সেনা সদস্য। তারা আসাম রাইফেলস সদস্য ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে চিকিৎসাধীন।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক আশুতোষ কুমার সিনহা বলেন, ‘সব নিরাপত্তা বাহিনীর শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এই হামলা হয়েছে।’
এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা দ্য ওয়্যার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে উপত্যকাভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো জড়িত। তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভবত পিএলএ (পিপলস লিবারেশন আর্মি) এই হামলা চালিয়েছে।’ তবে, দ্য ওয়্যার এই দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। কর্মকর্তা আরও জানান, ‘তদন্ত চলছে।’
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য ওয়্যার জানায়, সশস্ত্র ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলে এসে ওৎ পেতে ছিল। হামলাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে জওয়ানরা প্রতিরোধের সুযোগ পাননি। কয়েক রাউন্ড গুলি চালানোর পরই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বেসামরিক নাগরিক, সেনা জওয়ান এবং রাজ্য পুলিশের কমান্ডারসহ ২৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন এবং ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ফলে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, গ্রাম ধ্বংস এবং পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।