
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দলের ভেতরে বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার খুলনা জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহবায়ক, উপজেলা বিএনপির বিদায়ী আহবায়ক, খুলনা- ৫ আসনের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ। একই সাথে দুই পদে থাকার বদৌলতে মফিজ পড়ে গেছেন ঝামেলায়।
বিষয়টা নিয়ে জেলা উপজেলায় রীতিমতো ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে একরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছেন দুই দুবারের সফল চেয়ারম্যান, স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোল্লা মফিজ।
পাচ আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে সদ্য বিদায়ী স্থানীয় এমপি, সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের একটি গাড়ি নিজের জিম্মায় রেখেছেন, এমন অভিযোগে বিএনপির ডুমুরিয়া উপজেলা আহবায়কের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, আবার জেলার যুগ্ন আহবায়কের পদে তাকে রাখা হয়েছে।
অবশ্য এর কিছু দিন বাদেই জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি নানা কারনে বিলুপ্ত করা হয়। স্থানীয় খুলনা নিউমার্কেটে একটি কফি শপে বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা হয় অন লাইন পোর্টাল প্রথম সময় নিউজ ডটকমের সঙ্গে মোল্লা মফিজের।
যুবনেতা মোশাররফ হোসেন মফিজ। ডুমুরিয়া মোল্লা পরিবারের সন্তান। ছাত্রদলের একেবারে তৃনমূল থেকে উঠে আসা বিএনপির নেতা। পরিবার, আভিজাত্য, বংশীয় মর্যাদার কারনে এই পরিবার একই সাথে যথেষ্ট প্রভাবশালী, ভীষণ জনপ্রিয়।
জাতীয় পার্টির এরশাদ সরকারের আমলে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী কর্নেল গাফফারের বিরুদ্ধে যে কয়জন বা পরিবার রাজনীতি করেছেন, তার মধ্যে মোল্লা পরিবার অন্যতম। মোল্লা মফিজের বড় ভাই মোল্লা আবুল কাশেম ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন।
প্রয়াত সিরাজ ছিল খুলনা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তাকে একদল দুর্বৃত্ত গুলি করে মেরে ফেলেন। পারিবারিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় মোল্লা মফিজ টানা দুইবারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এমনকি মফিজ আওয়ামীলীগ আমলেও চেয়ারম্যান ছিলেন।
গত প্রায় চার দশক ধরে এই মোল্লা পরিবার ডুমুরিয়াতে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। দলের প্রতি প্রতিনিয়তা বিশ্বস্ততা, বিপদে আপদে মানুষের পাশে থাকা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আম জনতার হৃদয় জয়া করার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে ডুমুরিরার রাজনীতিতে যেমন মোল্লা পরিবার তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, তেমনি সময়ে অসময়ে নানামুখি ষড়যন্ত্রেও পড়েছেন।
বিষয়টা অবলীলায় স্বীকার করে তরুন প্রজন্মের এই বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বলেছেন, আমার- আমাদের জনপ্রিয়তাই আমার- আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
দুই সন্তানের জনক, একইসাথে শিক্ষিকা স্ত্রীর জামাই মোল্লা মফিজ ষড়যন্ত্রের একটি ঘটনা তুলে ধরে প্রথম সময়কে জানান, পাচ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরে আমাদের বিদায়ী এমপি নারায়ন স্যারের ড্রাইভার ভয়ে হোক আর আক্রমনের শিকার হতে পারে এমন আশংকায় হোক, আমাদের বাসার পাশে গাড়িটি ফেলে রেখে চলে যায়।
মেবি হতে পারে, কেউ তাকে বলেছে বা নিজেই বুদ্ধি করে নিজের ধারনা থেকে আমাদের পাশে গাড়ি রেখেছে, তার মনে হয়েছে, আমাদের বাসার পাশে গাড়ি রাখলে আর কেউ এটাক করবে না বা আগুন দেবে না। গাড়িটি কি গাড়ি ছিল? ল্যান্ড ক্রুজার, প্রাডো বা অন্য কোন ব্রান্ডের দামি গাড়ি কিনা এমন প্রশ্নে মোল্লা মফিজ জানান, গাড়িটি ছিল একটা যাত্রী টানার (টিগার) গাড়ি। নামি দামি কোন ব্রান্ডের গাড়ি না।
৫ আগস্টে গাড়িটিতে উত্তেজিত জনতা আগুনও দিয়েছে, সেই অবস্থায় ড্রাইভার গাড়িটি ফেলে রেখে চলে যায়। সেটিকেই পরে কালার দেয়া হয়, আমি এমপির গাড়ি নিজের নিয়ন্ত্রনে এনে রেখেছি।
অন্য একটি দল রীতিমতো গোয়েবলসি কায়দায় অপপ্রচার চালিয়ে যায়। এলাকার নিরীহ জনগনের অনেকেই তাদের মিথ্যাচারকে সত্য বলে ধরে নিয়েছিল, পরে অবশ্য তাদের ভুল ভেংগে যায়। এর মধ্যেই দল থেকে একটি উৎসাহী গ্রুপ আমার নামে কেন্দ্রে নালিশ জানালে আমাকে উপজেলা আহবায়কের পদ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়।
অব্যহতির পরে জেলার যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে ছিলাম, পরে যে কোন কারনে হোক, জেলা কমিটিও ভেংগে দেয়া হয়। মফিজ জানান, দল থেকে পাওয়া শোকজের জবাব তিনি ইতমধ্যেই দিয়েছেন, আশাবাদ ব্যক্ত করে মফিজ জানান, আমার বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগ হাস্যকর।
আমরা স্বামী- স্ত্রী দুজনাই শিক্ষক। এমন অনৈতিক কাজ আমাদের পক্ষে অসম্ভব। ফ্যামিলি ট্রাডিশনের সাথে যায় না। তার উপরে সেটা ময়লার গাড়ি, এমন গাড়ি কেন নিতে যাবো? আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের অনেক দিয়েছেন। পরিশেষে মফিজ জানান, আল্লাহ নিশ্চয়ই এমন অপপ্রচারের বিচার করবেন।
আগামীকালঃ যে কারনে বিএনপি নেতা মফিজকে এমন অপপ্রচার ছড়ানো হলো।