
অনলাইন ডেস্কঃ
খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমের মুক্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট দ্বিতীয় দিন অব্যাহত রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ও বৃহত্তর ফরিদপুরের ছয় জেলাসহ ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে এসব জেলার পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি তেলের সংকট সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। দ্রুত সমাধান না হলে পাম্পগুলো তেলশূন্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিবেশক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি। এদিকে ধর্মঘটের মধ্যেই সোমবার দুপুরে আদালত শ্রমিকনেতা আলী আজিমের জামিন নামঞ্জুর করেছে। খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ (মঙ্গলবার) আবার জামিনের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি, খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ট্যাংকলরি শ্রমিক কল্যাণ সমিতি রবিবার দুপুর থেকে এ ধর্মঘট শুরু করে।
ধর্মঘটের ২য় দিন সোমবার সকাল ৮টায় শ্রমিকরা পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো গেটের সামনে ট্যাংকলরি রেখে কর্মবিরতি শুরু করেন। এ সময় তারা সব ধরনের জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ রাখেন। এরপর নতুন রাস্তার মোড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভে তারা তাদের নেতার মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের নামে অন্য যেসব মামলা চলমান রয়েছে সেগুলোও প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন খুলনা বিভাগীয় সহসভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, অনেক আগে বিএনপির ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় মামলায় সাধারণ সম্পাদক আলী আজিমকে রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার তার জামিন শুনানি ছিল। মামলার বাদী আদালতে দাঁড়িয়ে ঘটনার সঙ্গে আলী আজিমের সম্পৃক্ততা নেই বলেছেন। ভুলবশত নামটি চলে এসেছে। এরপর তিনি এফিডেভিটও করেছেন। কিন্তু মহানগর আদালতের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে পুনরায় আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
সংগঠনের সভাপতি এনাম মুন্সি বলেন, আদালতের নির্দেশ আমাদের হতাশ করেছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদককে নিঃশর্ত মুক্তি এবং অন্য যে সব শ্রমিকের নামে মামলা আছে সেগুলো প্রত্যাহার করা না হলে কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কারণ, আমরা তো রাজনীতি করি না, আমরা খেটে খাই। তা হলে আমাদের নামে মামলা দিয়ে কেন হয়রানি করা হবে, এটাই আমাদের প্রশ্ন।
অন্যদিকে জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির খুলনা বিভাগীয় শাখার সভাপতি আব্দুল গফফার বিশ্বাস বলেন, রবিবার সকালে আমরা সামান্য তেল পেয়েছিলাম। তার আগে শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে তেল উত্তোলন করা যায়নি। আর রবিবার বিকাল থেকে সোমবার তেল উত্তোলন বন্ধ। শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে মঙ্গলবার দুপুর থেকে পরিবহন মালিকরা তেল পাবেন না। কেননা এই সময়ের মধ্যে পাম্পগুলো তেলশূন্য হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, শুধু শ্রমিকরাই নন, দেশের পটপরিবর্তনের পর অনেক মালিকের নামেও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ থেকে আমরাও মুক্তি চাই।
ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন খুলনা বিভাগীয় সভাপতি এনাম মুন্সি বলেন, তাদের অনেক শ্রমিকের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সব মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল মোবাইলে বলেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে ১৬ জেলার বেশকিছু পাম্পে জ্বালানি তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না হলে এসব জেলার সব পাম্পই তেলশূন্য হয়ে যাবে।
খালিশপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ আগস্ট খুলনা নগরের খালিশপুর থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ইলিয়াস শেখ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেনসহ ৭৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় শ্রমিকনেতা আলী আজিমও আসামি।
২৬ জানুয়ারি দুপুরে এ মামলায় খুলনা ডিবি পুলিশ শ্রমিকনেতা আলী আজিমকে গ্রেফতার করলে কর্মবিরতি শুরু হয়। এরপরই নগরীর নতুন রাস্তা মোড়ে তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকরা।