
অনলাইন ডেস্কঃ
আদালতের রায়ের পর নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরার রাস্তা তৈরি হয়েই আছে। রাজনৈতিক দলগুলোরও এ বিষয়ে দ্বিমত নেই, তবে সেই সরকার কেমন হবে- তা নিয়ে আছে মতপার্থক্য। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।
সংস্কার কমিশনগুলোর দেয়া সুপারিশের ভিত্তিতে গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ আলোচনার প্রথম ধাপে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে মৌলিক বিষয়গুলোর আলোচনা চলছে। রোববার (২০ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ফের আলোচনায় বসবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতারা। সেখানেই ১২ প্রস্তাব করতে যাচ্ছে কমিশন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; সংসদ যদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হয়:
সংবিধানের ৫৮(খ) সংশোধণপূর্বক;
(১) সংসদের মেয়াদ অবসান হবার ১৫ দিন পূর্বে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনও কারণে সংসদ ভেঙে গেলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।
(২) মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে: সংসদের মেয়াদ অবসান হবার ৩০ দিন পূর্বে জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় নিম্নকক্ষ হতে ১. প্রধানমন্ত্রী/সংসদ নেতা/সরকারি দলের সংসদীয় দলনেতা, ২. বিরোধী দলীয় নেতা, ৩. নিম্নকক্ষের স্পিকার, ৪. নিম্নকক্ষের বিরোধী দলীয় ডেপুটি স্পিকার, ৫. নিম্নকক্ষের সংসদ উপনেতা/প্রধান হুইপ, ৬. বিরোধী দলীয় উপনেতা/বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ ৭. নিম্নকক্ষের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি, ৮. উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান/স্পিকার, ৯. উচ্চকক্ষের বিরোধী দলীয় ডেপুটি চেয়ারম্যান/ডেপুটি স্পিকার, ১০. উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ১১. উচ্চকক্ষের সংখ্যালঘু দলের (প্রধান বিরোধী দল) নেতা, ১২. রাষ্ট্রপতি মনোনিত উচ্চকক্ষের একজন সদস্য এবং ১৩. উচ্চকক্ষের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন সদস্য- মোট তের (১৩) সদস্য সমন্বয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটির যে কোনও বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন উচ্চকক্ষের/নিম্নকক্ষের স্পিকার।
(৩) এই কমিটি গঠিত হবার পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কমিটির সদস্যগণ সভায় মিলিত হয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে বাছাই করবেন এবং তিনি সংসদের মেয়াদ অবসানের পর হতে পরবর্তী ৯০/১২০ দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
(৪) এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে কোনও ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পর প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য নিম্নকক্ষের সরকারি দল/জোট পাঁচ (৫) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন এবং নিম্নকক্ষের প্রধান বিরোধী দল/জোট পাঁচ (৫) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন। সংসদের নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের তৃতীয় বৃহত্তম দল দুই কক্ষের তরফ হইতে দুই (২) জন করে মোট চার (৪) জন উপযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন। (এই সংবিধান এবং আইনের বিধানাবলী দ্বারা ‘উপযুক্ত ব্যক্তি’র যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারিত হইবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার বয়সসীমা, যা এখন ৭২ বছর, এ বিষয়ে আলোচনা করত; পুন:নির্ধারণ করা যেতে পারে)।
(৫) প্রস্তাবিত চৌদ্দ (১৪) জন ব্যক্তির জীবন ও কর্ম নিয়ে কমিটি পরবর্তী পাঁচ (৫) দিনের মধ্যে সংসদের নিম্নকক্ষে শুনানীর আয়োজন করবে, যেখানে উচ্চকক্ষের সদস্যগণও অংশগ্রহণ করবেন।
(৬) শুনানি সম্পন্ন হবার পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল/জোটের প্রস্তাবিত পাঁচ (৫) জন ব্যক্তির নামীয় তালিকা হতে প্রধান বিরোধী দল/জোট যে কোনও এক (১) জনকে বাছাই করবেন; অনুরূপভাবে প্রধান বিরোধী দল প্রস্তাবিত পাঁচ (৫) ব্যক্তির নামীয় তালিকা হতে সরকারি দল যে কোনও এক (১) জনকে বাছাই করবেন। অন্যান্য বিরোধী দলসমূহের প্রস্তাবিত মোট চার (৪) জনের নামীয় তালিকা হতে সরকারী দল/জোট যে কোনও একজনকে বাছাই করবেন এবং প্রধান বিরোধী দল/জোট যে কোনও এক (১) জনকে বাছাই করবেন। সরকারি দল ও বিরোধী দলের প্রস্তাবিত ১০ ব্যক্তির নামীয় তালিকা হতে নিম্নকক্ষের তৃতীয় বৃহত্তম দল যে কোনও এক (১) জনকে বাছাই করবেন। এই পদ্ধতিতে কোনও দল বা জোট অভিন্ন ব্যক্তির নামও প্রস্তাব করতে পারবেন।
(৭) এই পদ্ধতিতে যদি সকল পক্ষ হইতে কোনও অভিন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবিত হয়, তবে তিনিই হইবেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আর যদি সকল পক্ষ কোনও অভিন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাছাই কমিটির সদস্যগণ র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে উক্ত সংক্ষিপ্ত তালিকা হতে যে কোনও এক (১) জনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে বাছাই করবে এবং পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তিনি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরবর্তী ৯০/১২০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় তিনি শপথ গ্রহণ করবেন না।
(৮) কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি কোনও সময় ব্যতিরেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পূর্ববর্তী র্যাঙ্কড চয়েজ/ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করবেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হইলে র্যাংক চয়েজ/ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হইবেন। এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও পূর্বতন উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনও পদ শূন্য হইলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্যপদ পূরণের অধিকার রাখবেন।
(৯) নিয়োগ লাভের পর প্রধান উপদেষ্টা তার সরকার পরিচালনার জন্য সংবিধান ও আইনের বিধানাবলীতে নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যাক্তিদের মধ্য হতে অনধিক পনের (১৫) জন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ প্রদান করবেন।
(১০) মেয়াদ অবসান ব্যতিত অন্য কোনও কারণে সংসদ ভেঙে ভঙ্গ হবার পরবর্তী চব্বিশ (২৪) ঘন্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের উভয় কক্ষের একই ধরণের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠিত হবে এবং সেই কমিটি পরবর্তী চৌদ্দ (১৪) দিনের মধ্যে উক্তরূপ অভিন্ন পদ্ধতিতে এক (১) জন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে বেছে নেবেন এবং তিনি কোনও সময় ব্যতিরেকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হবেন।
(১১) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবেন এবং উপদেষ্টাগণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবেন।
(১২) এই সংবিধানে বর্ণিত বিধানাবলী সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হইবে।
(যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয়ে বর্তমান এক কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বহাল থাকে, তাহলে প্রস্তাবিত ১৩ সদস্যের মধ্যে কেবলমাত্র নিম্নকক্ষ হতে প্রস্তাবিত ৭ জনকে নিয়ে বাছাই কমিটি গঠিত হবে এবং সেই কমিটি ওপরে বর্ণিত পদ্ধতিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চুড়ান্ত করবে)