
মিষ্টি মেয়ে কবরী ছিলেন এক সাহসি যোদ্ধা । তিল তিল শ্রম মেধায় তিনি নিজের বিশালতা তৈরি করেন। ২০০৮ সালের সরাসরি ভোটে নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হয়েছিলেন। সেই ভোটকে ঘিরে বাবু সরোয়ারের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি , ওসমান পরিবারের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন । কেয়ার করেননি। ভোটে জয়ী হলেন। ভোটের আগে পরে শামীম ওসমানকে ধমক দিয়েছিলেন অনেকবার । লড়াইও করেছেন ৫ বছররের এমপি জীবনে। সাহস নিয়ে চলেছেন। পরের বার মনোনায়ন পাননি রাজনীতি থেকে সরে যান ।
ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অন্য উচ্চতায় ।ওয়ান ইলেভেন সময় আরটিভিতে একটি টক শো করতাম। একবার অতিথি ছিলেন রাজ্জাক ও কবরী। নায়ক রাজের আসতে বিলম্ব হয়। কবরী ক্ষুব্ধ হলেন। আমি বললাম, মান না অভিমান ? জবাবে বললেন, অতিথি ঠিক সময় আসে না কথা কম বলবে। আমি বললাম আচ্ছা । রাজ্জাক সাহেব আসার পর একচোট নিলেন। অনুষ্ঠান শেষে বললাম মাথা ঠান্ডা হয়েছে? জবাবে বললেন, ফোন দিও। আলাপ আছে।
দারুন একজন মানুষ ছিলেন। ঢাকা ও কলকাতা আড্ডা দিয়েছি। জমিয়ে রাখতেন সবাইকে। বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম।
সফল এই মানুষটিরও চাওয়া পাওয়া ছিলো। আবেগ, বিরহের মন ছিলো। শেষ জীবনে বলেছেন অনেক কথা। জীবনের আক্ষেপ নিয়ে একটি দৈনিকে বলেছিলেন, “আমার একটা দুঃখ রয়ে গেল, জীবনে আমি একজন ভালো বন্ধু পেলাম না, ভালো স্বামী পেলাম না। সন্তানেরা অনেকটা যার যার মতো করে আছে। কিন্তু সঙ্গ দেওয়ার মতো একজন ভালো মানুষ আমি পাইনি, যাকে বলতে পারি, এসো, এক কাপ চা খাই, একটু গল্প করি। এটাই হয়তো মানুষের জীবন। তবে মানুষের চাওয়ার তো শেষ নেই। মনে হয়, যদি আমার একজন বন্ধু থাকত, তাহলে যখন-তখন তার সঙ্গ পেতাম। এই আনন্দটুকু আমি পাইনি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। “
আক্ষেপ নিয়েই কোভিডকালে চলে গেলেন তিনি । আজ ছিলো তার জন্মদিন। যেখানে আছেন, সৃষ্টিকর্তা আপনার জীবনের সকল আক্ষেপের অবসান করুক।
নইম নিজামের ওয়াল থেকে, লেখক: নইম নিজাম, সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক