
অনলাইন ডেস্কঃ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেন আবারো জেগে উঠেছে ছাত্ররাজনীতি। সময়ের স্রোতে আন্দোলন থেকে উঠে আসা তরুণ ছাত্রনেতারাই এখন ডাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে নতুন ছাত্রনেতৃত্বের যে ঢেউ উঠেছিল, তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা একাধিক ছাত্র সংগঠন এবার নতুনভাবে সক্রিয়। যদিও জুলাই আন্দোলনের অনেকেই এবার শিক্ষার্থী নন, তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে থাকবেন তারা। তবু আন্দোলন থেকে উঠে তরুণ নেতারাই এবার ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায়।
ঢাবি প্রশাসন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন জমা হবে ১৯ আগস্ট, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ ২৫ আগস্ট এবং ভোটগ্রহণ ৯ সেপ্টেম্বর। সর্বোচ্চ বয়সসীমা উঠিয়ে দেওয়ায় এবার পূর্ণকালীন শিক্ষার্থীরা যেকোনো বর্ষ থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন, তবে সান্ধ্যকালীন ও পেশাদার কোর্সের শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অযোগ্য বলে জানানো হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ২৮টি পদের জন্য ভোট হবে। এর মধ্যে চারটি নতুন পদ সংযুক্ত হয়েছে: গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক, এবং মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক।
দলীয় ব্যানারের বাইরে গিয়ে এবার অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আলোচনায় উঠে এসেছে যাঁদের নাম, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন:
আবু বাকের মজুমদার (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ)
জাহিদ আহসান ও তাহমিদ আল মুদ্দাসির চৌধুরী (কোটা আন্দোলনের সংগঠক)
আবদুল কাদের (ঢাবি শাখা আহ্বায়ক)
উমামা ফাতেমা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন)
মহিউদ্দিন মুজাহিদ (ঢাবি সাংবাদিক সমিতি সভাপতি)
আবিদুল ইসলাম খান ও বি এম কাওসার (ছাত্রদল-ঘনিষ্ঠ প্রার্থী)
মেঘমল্লার বসু (ছাত্র ইউনিয়ন)
জাবির আহমেদ (বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী)
আবু সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদ (ইসলামী ছাত্রশিবির)
বিন ইয়ামিন মোল্লা (ছাত্র অধিকার পরিষদ)
নির্বাচনকে সামনে রেখে ছাত্র সংগঠনগুলো যেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তেমনি বিতর্কও কম নয়। নির্বাচন কাঠামো ও ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ তুলেছেন একাধিক সংগঠনের নেতারা। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, উচ্ছ্বাস যেন বঞ্চনায় রূপ না নেয়, প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জেলা কুচক্রী গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ থেকে নির্বাচনকে মুক্ত রাখা জরুরি।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাক্তন সভাপতি আবু সাদিক কায়েম নির্বাচনের আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রায় দুই দশকের দাবির পর আবারও গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ বলেন, নির্বাচনে অর্থশক্তির অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, প্রশাসনের দায়িত্ব হবে তা নিশ্চিত করা।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু নির্বাচনের আয়োজন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও নীতিনিষ্ঠ প্রক্রিয়াই পারে প্রকৃত নেতৃত্ব তুলে আনতে। এবারের নির্বাচনের ফল শুধু নেতৃত্ব নয়, ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করবে।
সূত্র : প্রথম আলো