
অনলাইন ডেস্কঃ
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর মামলায় গ্রেফতারকৃত ৬ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে গোয়ালন্দ ও কালুখালী আমলী আদালতের বিচারক তানজিম আহম্মেদ এ আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবি ইমদাদুল হক বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের আদালতে তোলার পর জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক সবার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। সেইসাথে, এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে কাউকে হয়রানি না করতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দেওয়ান পাড়ার আফজাল সরদারের ছেলে মো. শাফিন সরদার (১৯), মো. জহির উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক জনি (৩২), ১ নং দিরাস্তুল্লাহ মৃধা পাড়ার মৃত আক্কাস মৃধার ছেলে উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মাসুদ মৃধা (২৯), বালিয়াডাঙ্গার লাল মিয়া মৃধার ছেলে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা (৪০), কাজীপাড়ার কাজী আরিফের ছেলে মো. কাজী অপু (২৫) ও দেওয়ান পাড়ার মোকলেসুর রহমান মৃধা ছেলে হায়াত আলী মৃধা (২৯)
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ফুটেজ পর্যালোচনা করে শনিবার দিবাগত রাতে ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে গোয়ালন্দ থানার বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর মামলায় ৫ জন এবং রোববার দুপুরে আরও একজনসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, এখন পর্যন্ত নুরাল পাগলের মাজার ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নিহতের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি বলে নিশ্চিত করেন ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে, শুক্রবার দিবাগত রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই মো. সেলিম মোল্লা বাদি হয়ে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ এনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, নুরাল পাগলের কবর উঁচু থেকে নীচু করাসহ বিভিন্ন দাবিতে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারের দিকে যেতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন ও থানা পুলিশ তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি গাড়ি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করে। সেই সাথে ৫ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় প্রশাসনের ২জনকে পিটিয়ে ও ঢিল ছুঁড়ে আহত করে।
এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা করে নুরাল পাগলের বাড়ী ও দরবারের গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে ভবন ও দরবার শরীফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এক পর্যায়ে জনতা নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় নিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়ালন্দ পাক দরবারের পীর নুরাল হক নুরাল পাগলের মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবার শরীফের ভেতরে কাবা শরীফের আদলে রং করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নীচু, রং পরিবর্তন ও ইমাম মাহদি দরবার শরীফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি করে শুক্রবার বাদ জুম্মা বিক্ষোভের ঘোষণা দেয় জেলা ইমান আকিদা রক্ষা কমিটি।