
স্পোর্টস ডেস্কঃ
এশিয়া কাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। তবে আয়োজক, স্পনসর ও দুই দেশের ভক্তদের জন্য টুর্নামেন্টের আসল উত্তেজনা শুরু হবে রোববার। কারণ সেদিন মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই সব সময়ই ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। তবে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাতের পর এবার দুবাইয়ের ম্যাচটি পাচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা তাদের একটি এক্সপ্লেইনার আর্টিকেলে এ নিয়ে নানা দিক তুলে ধরেছেন।
যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে মাঠে মুখোমুখি:
গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ভয়াবহ উত্তেজনা তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় যুদ্ধ এড়ানো গেলেও দ্বন্দ্ব তীব্র হয়। এরপর এশিয়া কাপে আবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই দেশ।
প্রায় ১৮ বছর হয়ে গেছে দুই দল টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয়নি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজও বন্ধ আছে প্রায় ১৩ বছর। তবে সেপ্টেম্বরে ১৪ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে ফলাফলের ওপর নির্ভর করে ভারত-পাকিস্তান তিনবার মুখোমুখি হতে পারে।
রাজনীতি আর খেলাধুলার টানাপোড়েন:
১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে ভারত-পাকিস্তান চারটি যুদ্ধ করেছে। কাশ্মির ইস্যুতে দুই দেশের শত্রুতা এখনও বিদ্যমান। এ কারণে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট বন্ধ। তবে আইসিসি বা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের টুর্নামেন্টে তারা নিয়মিতই মুখোমুখি হয়।
এশিয়া কাপও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। ১৯৯০-৯১ সালে ভারত টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে পাকিস্তান খেলেনি। ১৯৯৩ সালের আসরও বাতিল হয় দুই দেশের উত্তেজনার কারণে।
আয়-রোজগারের বড় উৎস ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ:
আইসিসির সাবেক মিডিয়া প্রধান সামি উল হাসান বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ওপর। যত বেশি দর্শক, তত বেশি স্পনসর আর রাজস্ব।’
আইসিসি অতীতে একাধিকবার ড্র বদলে দিয়েছে শুধু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিশ্চিত করতে। পরিসংখ্যান বলছে, এসব ম্যাচেই দর্শকসংখ্যা সর্বোচ্চ।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫-এ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ টিভিতে দেখেছে রেকর্ড দর্শক। শুধু ভারতেই এ ম্যাচের ওয়াচ টাইম হয়েছে ২৬ বিলিয়ন মিনিট। বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ম্যাচের রেকর্ড ১৯.৫ বিলিয়ন মিনিটকেও ছাড়িয়ে যায় এটি।
অন্যান্য দেশগুলোর আক্ষেপ:
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে এত আলোচনায় অন্য দলগুলোর সমর্থকরা কিছুটা ক্ষুব্ধ। শ্রীলঙ্কান ভক্ত মোহাম্মদ আকরাম বলেন, “আমরা শুধু শ্রীলঙ্কাকে নিয়েই ভাবি। ভারত-পাকিস্তান নিয়ে মাথা ঘামাই না।’
শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি ফাইনাল খেলেছে—১৩ বার। ৬ বার শিরোপা জিতেছে তারা। আরেকবার জিতলেই তারা সমান হবে ভারতের সঙ্গে।
নিয়ম ভাঙার নজিরও আছে:
শেষ এশিয়া কাপে বৃষ্টিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। এরপর সুপার ফোর পর্বে শুধু এ ম্যাচের জন্য রিজার্ভ ডে রাখা হয়। টুর্নামেন্ট চলাকালীন এমন সিদ্ধান্তে সমালোচনা হয়।
শুধু ক্রিকেট ভক্তরাই নয়, খেলা সংশ্লিষ্ট অনেকেও তখন এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। এক দর্শক বলেন, খেলার নিয়ম আগে থেকেই ঠিক থাকে। মাঝপথে বদলানো মানে শুধু টাকার জন্য সবকিছু করা।’
সমর্থক ও আয়োজকদের প্রত্যাশা:
এবারের এশিয়া কাপে আয়োজকরা আশা করছে ভারত-পাকিস্তান অন্তত দুইবার মুখোমুখি হবে। আর ফাইনালে দেখা হলে সেটা হবে ইতিহাস। কারণ ১৯৮৪ সালে শুরুর পর থেকে এখনও কোনো ফাইনালে দুই দল মুখোমুখি হয়নি।
যা-ই হোক, রোববারের ম্যাচ ঘিরেই শুরু হবে এশিয়া কাপের আসল উত্তেজনা। দর্শক, স্পনসর আর সম্প্রচারকারীদের নজর থাকবে কেবল এক জায়গায়—ভারত বনাম পাকিস্তান।