
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, বিএনপির যুব অঙ্গসংগঠন, এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭৮ সালের ২৭ অক্টোবর, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি কেবল একটি সংগঠন তৈরি করেননি, বরং একটি নতুন আশা, একটি নতুন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা ছিল বাংলাদেশের যুবসমাজকে একটা স্বপ্নের সংগঠনের ছায়াতলে আনার একটি চমৎকার প্রয়াস।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে গড়ে ওঠা এই সংগঠন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে কাজ করেছে। আর এখন বাংলাদেশের তরুণ সমাজের আস্থা ভালোবাসা ও বিশ্বাসের প্রতীক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্র রক্ষা, গণমানুষের উন্নয়ন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
এই যুবদল, তরুণদের শক্তি এবং তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। যুবকদের হাত ধরে, বিএনপি প্রতিষ্ঠার সেই মুহূর্তে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রক্তমাংসে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। যুবদলের প্রতিষ্ঠা আমাদের দেখিয়েছে, কিভাবে একটি প্রজন্ম ইতিহাস রচনা করতে পারে। আজও যখন আমরা যুবদলের কথা স্মরণ করি, তখন সেই তীব্র আবেগ, সেই দেশপ্রেম ও দায়িত্বশীলতার চেতনা আমাদের মনে জেগে ওঠে। বাংলাদেশের ইতিহাসে যুবদল একটি চিরন্তন প্রেরণার উৎস, যা আজও আমাদের সামনে নতুন উদ্যমে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস যোগায়।
যুবদল প্রতিষ্ঠালগ্নের শুরু থেকেই যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যুবদলে নেতৃত্ব দানকারী নেতারাই এখন দেশের বিভিন্ন গুরুত্ব পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৯ জুলাই, , আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম নয়ন সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যুবদলের এই নতুন নেতৃত্বে যেমন নতুন সম্ভাবনা, তেমনই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা। আমাদের দেশের যুবসমাজের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠবে এই সংগঠন, যা নিজেদের অধিকার আদায়ে, স্বপ্নের বাস্তবায়নে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি এক নতুন যুগের সূচনা, যেখানে যুবদল আবারো জাতির মুক্তির সিঁড়ি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আজ ২৭ অক্টোবর, ২০২৪, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এদিনটি আমাদের কাছে একটি মহান স্মৃতি, যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে উঠা একটি শক্তিশালী সংগঠনের উদ্ভবের সূচনা করে। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে যুবদল বিএনপির শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করে আসছে, যেখানে বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে আন্দোলন সংগ্রামে অবদান ছিল, তা শুধু এই সংগঠনের জন্য নয়, বরং দেশের জনগণের জন্যও ছিল এক আশার দিশারী।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা সবসময় ছিলাম জাতীয়তাবাদের পক্ষে একটি বিশ্বস্ত হাতিয়ার ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতীক। এই দীর্ঘ যাত্রায়, যুবদল প্রতিটি বিপর্যয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে, তাদের অধিকার আদায়ে, জাতির মুক্তির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আজকের এই দিবসে, আমাদের সংগঠনের ইতিহাস ও গৌরবময় অর্জনকে স্মরণ করে, আমরা একত্রিত হয়েছি এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে। যুবদল আছে মানুষের হৃদয়ে, মানুষের সংগ্রামে, এবং একদিন আমাদের সংগ্রাম সফলতার শীর্ষে পৌঁছাবে—এটাই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। আমাদের যুব সম্পদ উন্নয়নের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন করেছি। দেশনায়ক তারেক রহমান আমাদের জন্য শুধুমাত্র একজন নেতা নন, তিনি আমাদের আদর্শের বাতিঘর, আমাদের আস্থার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। তাঁর নেতৃত্বে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ, আর যখন তিনি ঘোষণা দেন, তখন আমরা রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ি—এই সাহসী মানসিকতা আমাদের দিচ্ছে এক নতুন উদ্দীপনা। প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা তাঁর নেতৃত্বে অগ্রসর হচ্ছি, সংগ্রামে সমবেত হয়ে আমরা প্রমাণ করে দিচ্ছি, আমাদের আদর্শকে কেউ দমন করে রাখতে পারবে না। আজ, আমরা একসাথে যে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় রয়েছি, মানুষের স্বাধীনতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাচ্ছি, তাতে সর্বোচ দৃঢ়তা ও বিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে ও থাকবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল।’
ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক, রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘বিগত জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ছিল বিএনপির ১৬ বছরের আন্দোলনের এক গৌরবময় অধ্যায়, যা দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্ব ও নির্দেশনারই ফসল। তাঁর দিকনির্দেশনায়, আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল দৃঢ়তার সাথে সংগ্রামে নেমেছি, এবং প্রতিটি পদক্ষেপে তার আদর্শের আলোকে আমাদের পথ চলা অব্যাহত রেখেছি। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি—দেশ ও জনগণের মুক্তির জন্য আমাদের সংগ্রাম কখনো থামবে না। আজ আমরা সেই শক্তির ধারক হয়ে দেশের সেবায় ব্রত রয়েছি, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সবসময় সংগ্রাম করে গিয়েছি এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখব, ইনশা আল্লাহ্। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল দায়বদ্ধ এবং দেশের প্রয়োজনে যখনই ডাক পড়বে, তখনই আবারও আমরা ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে, আমরা আজ একত্রিত হয়ে এক পরিবর্তিত বাংলাদেশ তৈরি করতে চলেছি—যেখানে সকলের অধিকার ও মর্যাদা সমানভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, নিশ্চিত হবে গণমানুষের ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার। আমাদের যে সুদীর্ঘ সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগ, সেটিতে ভাস্মর হয়েই যুবদল তৃণমুল থেকে সমাজের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের জন্য নিরলস কাজ করে যাবে।’
দেশের প্রয়োজনে, যখন যেভাবে সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে, যুবদল কখনো পিছু হটেনি; বরং ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেই মুহূর্তে। যখন বন্যার্ত মানুষের কান্না ভেসে এসেছে, যুবদলের নেতাকর্মীরা কাদামাটির মধ্যে দিয়ে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ছুটে গেছেন, নিজেদের জীবন ও নিরাপত্তাকে তুচ্ছ করে। যখন আগুনের শিখায় মানুষ হারিয়েছে সব, তখন যুবদল তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, উদ্ধার করতে গিয়ে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, মানুষের নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকারকে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করে, যুবদল ঈদ, পুজা ও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে মানুষের পাশে থেকেছে, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে। আশা রাখি, মানুষের প্রতি এই মানবিকতা ও সহানুভূতিরই নাম যুবদল, এবং এই আদর্শকে মাথায় রেখে তারা এগিয়ে যাবে তরতর করে।
জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে, দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে তারা একটি সুতায় গাঁথা হয়ে উঠেছি, সকল ইউনিট একত্রিত হয়ে যুদ্ধে নেমেছে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। এই সংগ্রামের পথে তাদের অনেকের জীবন গেছে, অনেকে আহত হয়েছে, আর কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছে—এই দুঃখের চিত্র আমাদের হৃদয়ে গভীর আঁচড় কেটে গেছে।
তবে, এসব কষ্টের মাঝেও একটা বিষয় সত্য যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পেরেছে। আমাদের সহযোদ্ধারা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, কিন্তু তাদের সাহস ও আত্মত্যাগ আমাদেরকে আরও শক্তিশালী করেছে। এই যুদ্ধে তাদের চেতনা ও আদর্শের বিজয় হবে, এবং তারা সেই জয় অর্জনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের সংগ্রাম চলতেই থাকুক, কারণ বাংলাদেশ তাদের। তারা জানে, প্রতিটি সংগ্রামে তাদের বিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসই তাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই লড়াই শুধু একটি রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এটি তাদের আত্মপরিচয়ের সুরক্ষা, তাদের সংস্কৃতি ও জাতিগত ঐতিহ্যের সংরক্ষণ। তাদের লক্ষ্য একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। তাই, তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে—যতদিন না তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছায়। বাংলাদেশ তাদের, এবং তারা এর জন্য কখনোই পিছপা হবে না।
কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যুবদলের নেতাকর্মীরা সত্যিকার অর্থে জীবন বাজি রেখে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছেন। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে তারা ছুটে গেছেন দূরবর্তী গ্রামে, যেখানে বিপদের মধ্যে নিপতিত মানুষগুলো সাহায্যের জন্য অসহায় হয়ে পড়েছিল। ঝড়, ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস—কিছুরই তাদের সাহসকে দমাতে পারেনি। কারণ, তাদের সাহসের আঁধার, দেশনায়ক তারেক রহমান, তাদেরকে শিখিয়েছেন কিভাবে অকুতোভয় হয়ে এগিয়ে যেতে হয়। তাঁর নেতৃত্বে, যুবদল সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত, মানবতার সেবায় কখনো পেছনে ফিরে তাকায়নি।
বর্তমানে যুবদলের নেতাকর্মীরা সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশনায়ক তারেক রহমানের বার্তা নিয়ে, মাটির মানুষের আশা ও ভালোবাসার প্রতীক—ধানের শীষ সম্বলিত লিফলেট হাতে নিয়ে, ছুটে যাচ্ছেন দেশের প্রতিটি কোণে। তারা প্রতিটি হৃদয়ে পৌঁছে দিতে চান একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন, যেখানে প্রতিটি মানুষ নিরাপদ, সুখী ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন কাটাতে পারে। যুবদল, দেশনায়ক তারেক রহমানের বিশ্বস্ত হাতিয়ার হয়ে, দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে, আমাদের সমাজের প্রতিটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি পরিবর্তন আনতে তারা কখনো পিছপা হবে না। তাদের এই যাত্রা শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং মানবতার, ভালোবাসার এবং সমতার একটি মহান অভিযাত্রা।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সূত্রঃ ইত্তেফাক।