
অনলাইন ডেস্কঃ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচনের বিলম্বের আশঙ্কা নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলের লক্ষ্য, যদি নির্বাচন দাবিতে আন্দোলন করতে হয়, তবে যেন কোনও দল সরকারের পক্ষে অবস্থান না নেয়। বিএনপি আশা করছে, তাদের এই আলোচনা ও বৈঠকগুলো একত্রিতভাবে সরকারকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করবে। খবর বিবিসি বাংলা
শনিবার (১৯ এপ্রিল) থেকে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি। আগামী দু’সপ্তাহ জুড়ে এসব বৈঠকের পর দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য আরও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতা। আগামী ২১ এপ্রিল বিএনপি লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে এবং তাতে সরকারবিরোধী শক্তির মধ্যে আরও একত্রিততা আসবে বলে তারা আশা করছে।
বিএনপি এবং তার সমমনা দলগুলো সরকারের নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে বড় ধরনের সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। নির্বাচনের জন্য যে সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির প্রয়োজন, তা এখনও শুরু হয়নি। বিশেষ করে, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এর পাশাপাশি সরকার ঘনিষ্ঠ দলগুলো ‘আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন’ কিংবা ‘সংস্কার ও আওয়ামী লীগের বিচারের পরে নির্বাচন’ এমন বক্তব্য তুলে ধরছে, যা বিএনপি ও অন্যান্য দলের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি চাচ্ছে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবার সমন্বয়ে একযোগে আন্দোলন গড়ে তোলা। তবে বিএনপি এখনো সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী অবস্থান নিতে চায় না। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায় এবং নির্বাচনের জন্য মাঠে নামতে হয়, তবে সবার মধ্যে একত্রিতভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (১৬ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর নিজেদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি অবসানে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের একটি সময় ঘোষণা করে তার জন্য প্রস্তুতি শুরুর জন্য যে রোডম্যাপ চাইছে বিএনপি, সেটি এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা জোরদার হচ্ছে বলেই তাদের কাছে মনে হয়েছে।
দলের নেতারা যে ধারণা দিচ্ছেন তাতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ও তার পরদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যে বৈঠক বিএনপির হয়েছে, তা দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
তবে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের কিছু অংশের বিরুদ্ধে ‘নির্বাচন বিলম্বিত করার’ অভিযোগ উঠেছে, বিশেষত সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক আলোচনায় এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘দ্রুত নির্বাচন না করা বা বিলম্বিত করার জন্য কোনও কোনও পক্ষের তৎপরতা আমাদের কাছে দৃশ্যমান এবং তাতে সরকারেরও কেউ কেউ জড়িত আছে বলে অনেকের কাছে মনে হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও সেটি দেখা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে বিলম্বিত করা কিংবা না করার একটি চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সরকারের মধ্যেও একটি গোষ্ঠী এগুলোর সঙ্গে আছে বলে মনে হয়। এ প্রেক্ষাপটে আমরা আমাদের কর্মকৌশল ও কর্মপন্থা নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি।
কিন্তু কেন এই অনাস্থা জানতে চাইলে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে প্রস্তুতি নেয়ার কথা তিনি বলছেন না বা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিচ্ছেন না। আমরা এ বিষয়টিতেই স্পষ্ট হতে চাই।
বিএনপির সাবেক মিত্র জামায়াতে ইসলামী, যাদের আগে সংস্কারের দিকে বেশি গুরুত্ব ছিল, সম্প্রতি নির্বাচনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে দলটি। দলের আমির কিছুদিন আগে লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকায় এসে বলেছেন, জরুরি সংস্কার শেষ করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তার মতে, নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশের রাজনীতি আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনে করেছে নাগরিক ঐক্য। দলটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, ‘কাউকে যদি দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকতে হয় সেজন্যও তো নির্বাচন দরকার।’ ‘নির্বাচন ছাড়া তো ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। সেজন্যই দলগুলো জরুরি সংস্কার ও নির্বাচনের কথা বলে আসছে। নির্বাচন ছাড়া তো আর কোনও উপায় নেই।’
বিএনপির কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, নির্বাচনের জন্য সরকারকে দ্রুত প্রস্তুতি নিতে বাধ্য করা। দলটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, একযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং যদি সরকার নির্বাচনের জন্য যথাসময়ে প্রস্তুতি না নেয়, তাহলে রাস্তায় নেমে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
এদিকে, বিএনপি নেতারা দলীয় বৈঠকগুলোতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত না আসার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, সরকার সময়ক্ষেপণ করছে এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ না করে সংকট আরও গভীর করছে।