
আজ ১ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সাবেক সেনাপ্রধান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তিনি একজন সৎ প্রেসিডেন্ট হিসাবে সারা দেশে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন।
জাতির মুক্তির দুত হিসাবে তিনি সমাদৃত ছিলেন। ৭৫ পরবর্তী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি নতুন করে গড়ে তোলেন। জিয়া ছিলেন হ্যামিলনের বাশিওয়ালা। খাল খনন, নিরক্ষরতা দূরীকরনসহ ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়ে দেশকে পরনির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনতে উৎপাদনমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে দিন রাত পরিশ্রম করে শহীদ জিয়া দেশব্যাপি প্রসংশিত ছিলেন।
তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। সার্ক প্রতিষ্ঠা করে তিনি দক্ষিন এশিয়ায় নিজেকে নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ দক্ষিন এশিয়ার পাশাপাশি শহীদ জিয়া মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্ব- চীন- জাপানের সাথে কুটনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এসব রাষ্ট্রেও তিনি ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। মাত্র সাড়ে চার বছরের শাসনে জিয়া এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন, যে তার আদর্শকে ৮০র দশক থেকে আজ ২০২৫ এও কোটি কোটি আমজনতা ধারন করে আছে। ৮১র ৩০ মে শহীদ জিয়ার জানাজায় লাখো লোক সমাগমই তার জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে দেয়। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত জিয়া- বিএনপি- দলের প্রতীক ধানের শীষ আজ এক সূত্রে গাথা। বিএনপির জনপ্রিয়তা আজ অবধি ম্লান হয় নি। এরশাদ, জেনারেল মইন কিংবা আওয়ামী লীগ শত চেষ্টা করেও বিএনপিকে এতোটুকু ভাংতে পারেনি বা বিএনপির সামান্য ক্ষতি করতে পারে নি।
জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি ফ্রন্টলাইনের ফাইটার ছিলেন। জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। অসামান্য কৃতিত্বের জন্য বীর উত্তম খেতাব দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুপস্থিতিতে ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কোর্ট মার্শাল হতে পারে এমনটি জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার এই ঐতিহাসিক ঘোষনা যুদ্ধের সময় মুক্তিকামী বাঙালি জাতি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন করে অনুপ্রেরণা দেয়। যুদ্ধের সময়ে মুক্তিকামী বাংগালী নতুন করে দিক নির্দেশনা পায়। প্রকৃত অর্থেই শহীদ জিয়া একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাকে শতবার স্যালুট।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন তাঁরই সহধর্মিণী, এক সময়ের গৃহবধু বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সেই সময় থেকে আজ অবধি দলের চেয়ারপারসন। দেশ- বিদেশে প্রচন্ড জনপ্রিয় তিনি। দলে দায়িত্ব নেবার পরে ৮০র দশকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আপোষহীন ভুমিকার জন্য তিনি নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
গনতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য তিনি দেশব্যাপী দেশনেত্রী হিসাবে পরিচিত। প্রচন্ড ব্যক্তিত্বের অধিকারী বেগম জিয়া রাজনীতিতে আজ অবধি একটি বেফাঁস কথা বলেন নি। বিএনপির অংগসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সারা দেশে একটি বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। ৮০র দশক থেকে ছাত্রদল সারা দেশে ছাত্র সমাজের হৃদয় জয় করে দেশের প্রতিটি গনতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুই কোটি টাকার একটি আত্মসাতের সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায়) ফরমায়েশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি দুই বছরের বেশি সময় জেল খাটেন। অথচ সেই টাকা তিনি আজ অবধি স্পর্শ পর্যন্ত করেন নি, সেই টাকা এখনও ব্যাংকেই আছে।
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া মামলা, কারাভোগ ও পরে অসুস্থতার কারণে রাজনীতিতে এই মুহুর্তে তেমন সক্রিয় নেই। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন জিয়া দম্পতির বড় সন্তান তারেক রহমান। তিনি ২০০৭ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই দল পরিচালনা করছেন তিনি। আরেক সন্তান দেশের ক্রিড়া ব্যক্তিত্ব আরফাত রহমান কোকো ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে নির্যাতনের শিকারে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শহীদ জিয়া ও তার সন্তান কোকোকে বেহেশত নসিব করুক।
দেশি বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে গত পনের বছর বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। গনতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়াসহ দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন যা জাতির মুক্তির সনদ হিসাবে দেশ বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শত শত মামলা মোকদ্দমা হয়। এসব নেতা-কর্মীকে গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময় কারা অন্তরীণ রাখা হয়। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গুম- খুন করা হয়।
শুভ হোক বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সহ বিএনপির কোটি কোটি নেতা কর্মীকে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা- শুভকামনা। বিভিন্ন সময়ে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা। শহীদ জিয়া অমর হোক, বেগম জিয়া জিন্দাবাদ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মাতৃ সমতুল্য নেত্রি বেগম জিয়াকে সুস্থ রাখুক, দীর্ঘায়ু করুক। তারুণ্যের অহংকার, তারেক রহমান জিন্দাবাদ।
লেখক: শফিকুল আলম তুহিন, সাধারণ সম্পাদক, খুলনা মহানগর বিএনপি।